‘পেত্নি’ বা ‘শাকচুন্নির’ মাছ চুরি করে নিয়ে যাওয়া বা ‘খোয়াবনামা’য় কাৎলাহার বিলের ‘বিধর্মী’ ভূত এখন পুরোনো বিষয়। হালে ওপার বাংলার এক সিনেমায় মরে যাওয়া ‘হাত কাটা কাত্তিক’ মাস্তান হিসেবেও হাজির। আর গুপি গাইন বাঘা বাইনের ‘ভূতের রাজা দিলো বর’ তো এখনও আমাদের অনেকেরই মনে গেঁথে আছে।
ঢাকায় ভূত রেস্তোরাঁর তৃতীয় শাখায় গেলে ‘বর’ মিলবে না, বরং মিলবে খাবারদাবার। তাও আবার থাই, ইতালিয়ান আর কিছুটা জাপানি ও ফ্রেঞ্চ।
বনানী ১১ নম্বর রাস্তার ২৫ নম্বর বাড়ির লিফটে সোজা তেরো তলায় উঠে গেলেই পৌঁছে যাবেন এই রেস্তোরাঁয়। বাইরে সম্ভবত স্বাভাবিক কারণেই আছে একটি কংকাল-মুণ্ডুর ছবি!
ভেতরাটা অবশ্য খুব ভীতিকর কিছুনা। বেশ আরামদায়ক চোখের জন্য, বলাটাই যুৎসই! চমৎকারভাবে সাজানো চেয়ার-টেবিল, কাঁটা-চামচ ও গ্লাস। বসার ব্যবস্থা শ’খানেক লোকের। এরই মধ্যে আবার একটি ছোট ঘরে ১০ থেকে ১২ জন বসতে পারবেন জাপানি রেস্তোরাঁর আদলে। মানে নিচু টেবিলে মাটিতে আসন গেড়ে বসার মতো ব্যবস্থা।
এই ভূত রেস্তোরাঁর যাত্রা হয় এক দশেকেরও আগে। শুরুটা ধানমণ্ডিতে। ম্যানেজার রাহাত সামসের দাবি, "ভূত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম থিম রেস্তোরাঁ।"
কী হয় এই রেস্তোরাঁয়? আর দুনিয়া জোড়া নাম থাকতে ভূত কেন?
সামস বলেন, "একটু মজার জন্য আমদের কিছু খাবার সরবরাহকারী ভূত সেজে মানানসই সঙ্গীতের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই অতিথিদের বিনোদন দেয়। আবার ‘ভূতের কিন্তু অন্য একটি অর্থ আছে তা হচ্ছে অতীত।"
তারমানে এখানে বসে অতিথিরা ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ বলতে বলতে খানা খাবে এমনটাও তারা ভেবেছেন।
অন্দরসজ্জাতেও আছে কিছু চোখে পড়ার মতো বিষয়। কাচে ঘেরা চারদেয়ালের দুই-এক জায়গায় আছে ‘ভূত সর্বস্ব্য’ বাণী। দেয়ালের অংশেও আছে কিছু কথা-ছবি।
রাত ৮টার কিছুক্ষণ পরে হঠাত করেই পাল্টে গেলো পরিবেশ! আলো নিভে গেলো। আর শব্দে মনে হল ‘ভূতের কেত্যন’! সত্যিই তিন দশাসই আকারের ভূত বেরিয়ে এলো। দুইজনের সাজ দেশি আর অন্যজন বিদেশি হাতে রিপার (লম্বা হাতল ওয়ালা কাস্তে)! উপস্থিত তরুণ এক দম্পতি ব্যাপারটি বেশ উপভোগ করেছেন, তা ‘টাসকি খাওয়া’ নারী কন্ঠেই বোঝা গেলো!
‘ফরেস্ট মাশরুম সুপ’ যেমন স্বাদে তেমন গন্ধে! গরম গরম খুবই ‘রিফ্রেশিং’।
আলুভাজার (ফ্রেঞ্চ ফ্রাই) সসটি বেশ! ঠান্ডা গোছের এবং মুখরোচক এই সসের রহস্য শেফ কোনোভাবেই দিতে রাজি নন!
পাস্তার সসের গন্ধ বেশ ভালো টমেটো আর অলিভ অয়েলের দ্বৈত স্বাদ ভূতকে মনে না করালেও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাবারের ঘরানা মনে করিয়ে দেয়।
এই পাস্তা আর থাই খাবারের জন্য নুডুলস কিন্তু এই রেস্তোরাঁর ‘ঘরে বানানো’। ধানমণ্ডির নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে বানানো হয় এই দুই খাবারের উপকরণ।
তোমো সুপ, রোস্টেড চিকেন ব্রেস্ট আর চিকেন কাজুবাদামের সালাদও বেশ ভালো লাগবে এটা বলা যায়।
বিকাল-সন্ধ্যায় ছাত্র-তরুণদের জন্য আছে হ্যাপি আওয়ার। সেট মেন্যুতে ওই সময়ে কিছুটা সস্তায় খাওয়া যাবে।
ভালোকথা এই রেস্তোরাঁয় খাদ্য বিষয়ক কিছু জানতে চাইলে কথা বলতে পারবেন শেফের সঙ্গে, এমনকি চাইলে রসুইঘর ঘুরে দেখতে পারবেন!
খোলা থাকে প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ১১টা।
ছবি: তানজিল আহমেদ জনি।