উন্মাদীয় প্রদর্শনী

পথচলার শুরুটা বেশ অস্বস্তিকর ছিল। স্বাধীনতার ৭ বছর পর, দেশের রাজনৈতিক দোলাচাল তখনও তুঙ্গে। এমনি সময়ে যাত্রা শুরু করে, বাংলাদেশের প্রথম কার্টুন পত্রিকা ‘উন্মাদ’।

শরীফ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2014, 11:09 AM
Updated : 17 Oct 2014, 11:09 AM

ঘুরে-ফিরে হয়তো দেখা যাবে, দেশের সব কার্টুনিস্টেরই প্রথম 'কাজ' ছাপা হয়েছে এই পত্রিকায়। এবার কার্টুনিস্টদের এই খেরোখাতা সংগঠনই আয়োজন করেছে, নিজেদের নির্বাচিত প্রচ্ছদ প্রদর্শনী। উপলক্ষ পত্রিকার তিনশতম সংখ্যার প্রকাশনা।

ইশতিয়াক হোসেন ও কাজী খালেদ আশরাফের চেষ্ঠায় ১৯৭৮ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু করে, প্রায় ৩ যুগ এদেশের মানুষের হাসি-কান্না কার্টুনের অবয়বে লিপিবদ্ধ করেছে ‘উন্মাদ’। মাসিক এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যার দাম ছিল ২ টাকা। তবে সময়ের সঙ্গে নিজেদের অনেক কিছুই পাল্টে ফেলেছে জনপ্রিয় এই পত্রিকা। যেমন উন্মাদ সংগ্রহ করতে এখন খরচ করতে হবে ৩০ টাকা। যদিও গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে, কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়ে গেছে ‘উন্মাদ’। যেমন আগে হোয়াইট প্রিন্টের দাম বাড়লেই হাফ কাভারে দেখা মিলতো এই রম্য পত্রিকার।

পত্রিকার প্রচ্ছদে দামের উপস্থাপনও ছিল উন্মাদীয় ঘরানায়। যেমন: মূল্য - অমূল্য – দুর্মূল্য, পাঁচ টাকা। টয়লেট পেপারের চেয়েও সস্তা, মাত্র দশ টাকা। মে মাসে শ্রমের মূল্য, পনেরো টাকা।

বাঙালি মধ্যবিত্তের পড়ার পাশাপাশি দেখার অভ্যাসে সাড়া ফেলতে, এমনি নানাভাবে পকেটের সঙ্গে দামদর করেছে উন্মাদ।

তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, পত্রিকার রাজনৈতিক বয়ান। বরাবরই সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিজেদের কাগজ-পেন্সিলের মধ্য নিয়ে এসেছেন উন্মাদের কার্টুনিস্টরা।

এমনই সব ইতিহাসের খেরোখাতা দেখতে হলে অবশ্য প্রদর্শনীতে যেতেই হবে। এ পর্যন্ত ছাপা হওয়া তিনশ সংখ্যার মধ্যে ৭৭টি প্রচ্ছদের দেখা মিলবে এখানে। আর এই সব প্রচ্ছদের শিল্পীদের মধ্য রয়েছেন— কাজী খালিদ আশরাফ, সুলতানুল ইসলাম, নজরুল, আহসান হাবীব, জাভেদ, তারিকুল ইসলাম শান্ত, শিশির ভট্টাচার্য, জেরেমি ট্রেইনার, তানভীর ইবনে কামাল, মেহেদী হক, মানিক-রতন, কিশোর, তন্ময়সহ আরও অনেকেই।

“আমি তো শুরু করি যখন এইচএসসিতে পড়ি। এখনও দেখছি প্রচুর কলেজে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা কার্টুন আঁকে। প্রযুক্তির ব্যবহারে ডিজিটাল-ঝকঝকে ওদের আউটপুট। তবে যাই বলুন, উন্মাদই ওদের সাহস জুগিয়েছে। ধরুন আমাদের এখানে কর্মশালা পর্যন্ত হয়, যেখানে আমরা তরুণ কার্টুনিস্টদের শিখাই কীভাবে বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হবে, কাকে কতটুকু খোঁচা দেওয়া যাবে এইসব আর কি।"

কথায় কথায় এরকম অনেক গল্পই শোনালেন পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবীব।

ওহ চিনতে ভুল হবে না তো! ইনিই প্রধান উন্মাদক বলে পরিচিত কি না। সৃজনশীল তবে ব্যাঙ্গাত্মক এমন সব আঁকিবুকির জন্য বহু আগে থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। তবে এসব কিছুরই শুরু হয়েছিল উন্মাদ নামক তারুণ্য নির্ভর এই পত্রিকার মধ্য দিয়েই।

এক সময়ে কোনও বিজ্ঞাপন ছাড়াই প্রকাশিত হলেও, সময়ের তালে ‘মুক্তবাজার’ অর্থনীতির সঙ্গে ছন্দ মিলাতে মিলাতে এখন আর ‘বি-জ্ঞাপন’ ছাড়া চলছে না উন্মাদ। তবে তাই বলে উন্মাদনায় একটুও কমতি যে পড়েনি, তা অন্তত প্রচ্ছদগুলোতে নজর দিলেও বোঝা যাবে।

স্বৈরাচারী পল্লীবন্ধু এরশাদ থেকে শুরু করে হাল ফ্যাশনের অনন্ত জলিল, কেউই বাদ যাননি প্রচ্ছদ কার্টুন থেকে। যার জন্য ‘মামলা-হামলা’ সব কিছুরই মোকাবেলা করতে হয়েছে এই পত্রিকাকে। তারপরও যাত্রা থেমে যায়নি। আর তাই প্রদর্শনী কক্ষে বাতাসে ফোলানো বেলুন দিয়ে সাজানো আবহ আর দেয়ালে টাঙানো প্রচ্ছদগুলো ঠিক যেন উপহাস করছে আমাদের বাস্তব জীবনকে।

১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে শুরু হয়ে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই প্রচ্ছদ প্রদর্শনী।

প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যেকোনও উন্মাদকের জন্যই উন্মুক্ত রাখা হয়েছে এই আয়োজন। দৃক গ্যালারির ঠিকানা: বাসা ৫৮, রোড ১৫এ (নতুন), ধানমণ্ডি, ঢাকা ১২০৯। 

ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ।