পিঠে ব্যথায় করণীয়

পিঠ অর্থাৎ কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত যে কোনো কারণে ব্যথা হতে পারে। যা ‘ব্যাক পেইন’ নামে পরিচিত। এই ব্যথা যে শুধু বয়স হলেই হয়, তা নয়। এ অসুখের জন্য নানান কারণ থাকতে পারে।

ফজলে আজিমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2014, 02:32 AM
Updated : 4 March 2014, 06:22 AM

অপুষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত পুষ্টি কখনও কখনও শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয়। বেশি খাবার খেলে তা শরীরে শুধুমাত্র বর্জ্য বাড়ানো ছাড়া বাড়তি কোনো উপকারে আসে না। যারা খুব বেশি মাংস খেতে পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কারণ মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। অতিরিক্ত প্রোটিনের ফলে শরীরের ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। শরীরের জয়েন্টগুলোতে ইউরিক এসিড জমা হয়ে তখন বিভিন্ন গিরা ফুলে যায় ও সেখানে ব্যথা করে। এটা গেঁটে বাত বা রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস নামে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের আথ্রাইটিস সেই সঙ্গে ক্যালসিয়ামের অভাবে ‘ব্যাকপেইন’ দেখা যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যাকপেইনের কারণ ও এ থেকে মুক্তির উপার সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দেন মেডিকেল প্যাথলজি, চাষাঢ়া, নারায়নগঞ্জের মেডিকেল অফিসার ডা. এ কে এম বাছেত।

তিনি বলেন, “ব্যাকপেইন যে কোনো বয়সের যে কারও হতে পারে। কোথাও পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত, বার্ধক্য, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, পুষ্টির অভাব, অতিপুষ্টি এরকম আরও কিছু কারণে ব্যাকপেইন হতে পারে। ব্যাকপেইন হলে ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় ব্যথা প্রকাশ পেতে পারে।”

তিনি জানান, ৪০ পেরনো মহিলাদের ব্যাকপেইনের ঝুঁকি বেশি। এর পেছনে কতগুলো কারণ আছে। যেমন শরীরে হরমোনের পরিবর্তন, ঝুঁকে কাজ করা, মাতৃত্বকালীন সময়, ভারী জিনিস ওঠানো, পুষ্টির অভাব। এছাড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেও পিঠে ব্যথা দেখা দিতে পারে।

ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে বয়স্ক মানুষের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা দেখা দেয়। কোমরের হাড় সরে যাওয়া, মেরুদণ্ডে হাড় ক্ষয় বা বৃদ্ধি, ওজন বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের আথ্রাইটিসের কারণে কোমরে ও ঘাড়ে ব্যথা দেখা যেতে পারে।

এ সম্পর্কে ডা. বাছেত বলেন, “ঝাড়ু দেওয়ার সময় যদি ছোট ঝাড়ু ব্যবহার করা হয় তখন বেশি ঝুঁকতে হয়। ঝাড়ু ছোট হলে তা ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে কোমর ও মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে।”

তিনি আরও বলেন, “এ ছাড়া চেয়ারে বসার সময় বেশিক্ষণ সামনের ‍দিকে ঝুঁকে বসলেও কোমর ও ঘাড়ে ব্যথা দেখা দিতে পারে। এজন্য শিশুদের পড়ার টেবিলে বসার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে তারা খুব বেশি ঝুঁকে না বসে। চেয়ারে বসতে হবে মেরুদণ্ড ও ঘাড় সোজা রেখে। এ নিয়মটা বড়দেরকেও মেনে চলতে হবে।”

ব্যথা থেকে মুক্তি

‘ব্যাকপেইন’ থেকে মুক্ত থাকার জন্য দরকার সুস্থ জীবনা-যাপন। ডা. বাছেত পরামর্শ দেন, “চেয়ারে বসার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। সামনে ঝুঁকে বসবেন না। খাবারের তালিকায় রাখুন পুষ্টিকর শাকসবজি। ছোট মাছের কাঁটা ও মুরগির হাড়ে থাকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম। তাই এসব খাওয়ার অভ্যাস করুন। শিশুদেরও ছোট মাছ খেতে উৎসাহিত করুন।”

“অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি মানসিক চাপ বাড়লেও ব্যাকপেইন হতে পারে। মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে রুটিন অনুসারে কাজ করুন। নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো কিংবা অন্য কোনো ধরনের ব্যয়াম নিয়মিত চর্চায় ব্যাকপেইনের ঝুঁকি কমে। শরীরের ওজন যেন হঠাৎ করে বেড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।” বললেন বাছেত।

ব্যথা কমাতে ব্যায়াম খুবই কার্যকর। বাছেত বলেন, “যদি পিঠ ব্যথা হতে থাকে তবে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে শক্ত কোনো বিছানায় বা মেঝেতে মাদুর বা ম্যাট বিছিয়ে টান টান হয়ে শুয়ে থাকা। প্রতিদিন ১৫ মিনিটের এই ব্যায়াম পিঠ ব্যথা কমাতে অনেক সাহায্য করে।” পরামর্শ দিলেন বাছেত। 

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ‘রিলাক্সেশন’ বা বিনোদনের মধ্যে থাকা ও ‘মেডিটেশন’ বা ধ্যান চর্চায় ‘ব্যাকপেইন’ ও ‘স্ট্রেস’ বা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়। মেডিটেশনের ফলে শরীরের মাংসপেশীগুলো শিথিল হয়, এতে ব্যথা উপশম হয় বলে জানালেন ডা. বাছেত।

মানসিক চাপ যুক্ত পেশা, দুশ্চিন্তা ও ধূমপানের ফলে যে ‘ব্যাকপেইন’ হয় তা দূর করতে ওষুধের প্রয়োজন নেই। মানসিক চাপ কমাতে রুটিন করে কাজ করুন। ধূমপানের কারণেও ‘ব্যাকপেইন’ হয়। তাই এই অভ্যাস থাকলে বর্জন করুন।

ব্যথা বেশি হলে তাড়াতাড়ি স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

মডেলের নাম: তৃশা ও জিতু

ছবি কৃতজ্ঞতায়: ই স্টুডিও