‘মাটির ঘর’য়ে ভাত মাছ ও রসা

রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ। তবে থাকার জন্য নয়, বাহারি দেশি খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে চলে যেতে পারেন এই ‘মাটির ঘর’ রেস্তোরাঁয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2017, 09:43 AM
Updated : 14 August 2017, 11:28 AM

বেড়ার ফটক দিয়ে ঢুকেই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়বে কাঁচামাটির উঠানে গাছের ডালে ঝোলানো রয়েছে দড়ির তৈরি দোলনা-বিছানা। পাশেই কাঠ আর গুঁড়ি দিয়ে বসার ব্যবস্থা। বেশ একটা আয়েশি আড্ডার পরিবেশ। মন নেচে উঠলেও সংকোচ জাগে, ‘মাটির ঘর’য়ে এসে কি তবে অন্য কারও উঠানে ঢুকে পড়লাম নাতো!

তবে সাহস করে দোলানায় শুয়ে পড়লেই বুঝে যাবেন, নাহ ভুল জায়গায় আসেননি। একটু পাশেই ‘মাটির ঘর’ থেকে পাচক পঙ্কজ বেরিয়ে এসে হাঁক ছাড়বেন- “তাড়াতাড়ি আইসেন, খাবার ঠাণ্ডা হবে যাবে।”
‘মাটির ঘর’য়ে ঢুকেই মনে বয়ে যাবে শীতল পরশ। কাঠের চেয়ার টেবিল ফেলে বসার ব্যবস্থা। মাথার উপরে ঘুরছে ছোট ছোট ফ্যান। মাটির ছোট কলসির মতো পাত্রে খাবার পানি। পানও করতে হবে মাটির গ্লাসে। খাবার আসবে মাটির পাত্রে। খাবেনও মাটির পাত্রে।

পেটে যদি ‘ছুঁচোর নাচন’ নিয়ে খেতে বসেন, তবে নিশ্চিত থাকেন ‘হাতি পেট’ নিয়ে বের হয়ে আসবেন। খুদের ভাতের চচ্চড়ি কিংবা অন্য কোনো দেশি চালের ভাত। সঙ্গে চার-পাঁচ রকমের ভর্তা-ভাজি। আর মুরগির মাংস ও মাছের রসা।

‘রসা’ শুনে মনে আসতে পারে রসালো কোনো খাবার। স্থায়ীবাসিন্দা হিসেবে পঙ্কজ জানান, গাজীপুর এলাকায় ঝোলঝোল খাবারকে রসা বলা হয়। নামটা পরিচিত করতেই এই নামকরণ।

নাম যাই হোক, স্বাদে অতুলনীয় খাবারে গলা পর্যন্ত খেয়ে ফেলার পরেও চোখের ক্ষিধা মিটবে না। কারণ হয়ত একটাই সবই টাটকা খাবার।

রেস্তোরাঁর কর্ণধার জাকারিয়া আকন্দ বিপ্লব বলেন, “আসলে সবজিগুলো আশপাশের। স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা। মাছ আনা হয় টঙ্গির আব্দুল্লাহপুর মাছের আড়ত থেকে। চাল আনা হয় বিভিন্ন অর্গানিক প্রতিষ্ঠান থেকে। এখানে প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন রান্না হয়। তাই হয়ত টাটকা স্বাদের জন্য মুখ ফেরানো যায় না খাবার থেকে।”
আর পঙ্কজ, যিনি কাজের সূত্রে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে রান্নায় হাত পাঁকিয়েছেন, শুধু দেশি না ভারতীয় যে কোনো খাবার রান্না করতে পারেন বলে দাবি করেন, তার হাতের রান্নার প্রশংসা না করে পারা যাবে না।

বিপ্লব বলেন, “এমনিতে সকাল ১১টার মধ্যে জানিয়ে দিলে সেই হিসেবে খাবারের আয়োজন করা হয়। তবে কয়েকজনের জন্য বাড়তি খাবারের ব্যবস্থা সবসময়ই থাকে।”

বেশিরভাগ খাবারের দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।

পৈত্রিক-ভিটেমাটিতেই এই রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন বিপ্লব। প্রথমে এই ধরনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না তার। নিজে থাকার পাশাপাশি, এলাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে এই মাটির ঘর তৈরি শুরু করেন। আর চারুকলার বন্ধু মাফি’র ইচ্ছা ছিল এখানে করবেন আর্ট স্কুল। তবে এসব করতে দরকার অর্থকড়ি। আর এই এলাকায় রেস্তোরাঁ-ব্যবসা অর্থ জোগাড়ের সুবিধাজনক কাজ হিসেবে মনে হয়েছে বিপ্লবের কাছে।
তিনি বলেন, “শুধু রেস্তোরাঁ নয়, এখানে ধীরে ধীরে অনেক কিছুই গড়ে তোলা হবে। আর্ট স্কুল হবে। এলাকার সংস্কৃতি, কৃষ্টি আর ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার ইচ্ছে আছে আমার। রেস্তোরাঁ থেকে যা আয় হবে সেটা জমিয়েই এসব করবো। তাই তো ফিরে এসেছি। নিজের ঘরে। ইচ্ছে করলেই শহরে থাকতে পারতাম। তবে শিকড় আমাকে টানে বেশি।”
ছোটবেলায় যারা গ্রামের বাড়িতে বড় হয়ে এখন শহরে থেকে হাঁপিয়ে উঠছেন তারা সতেজ হতে চলে যেতে পারেন সেখানে। আর যারা শহরে বড় হয়ে কখনও গ্রাম্য-পরিবেশে পেটপূজা করেননি তাদের জন্য ‘মাটির ঘর’ হবে নতুন অভিজ্ঞতা।

রাজধানীতে ও আশপাশে যারা থাকেন তারা এই রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেয়েদেয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ঘরে ফিরতে পারবেন। তবে রাতের জন্য তাদের কোনো আয়োজন নেই। আর ফেরার আগে মরিচের চায়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

ঢাকার তিনশ ফিটের শেষ মাথায় গিয়ে হাতের বামে ‘ঢাকা সিটি বাইপাস’ রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে কালীগঞ্জের দিকে। পাঞ্জোরা পৌঁছালেই পেয়ে যাবেন ‘মাটির ঘর’। আর গুগল ম্যাপ ধরে এগোলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। এছাড়া তাদের ফেইসবুকে ঢুঁ দিতে পারেন facebook.com/মাটির-ঘর-149011152261757

ছবি: নিজস্ব ও মাটির ঘরের ফেইসবুক থেকে।