কেমন হবে মাংসহীন বিশ্ব?

নানা কারণে নিরামিষভোজী হচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ; কেউ সবজি খাচ্ছেন প্রাণীদের কষ্ট কমাতে, কেউ খাচ্ছেন সুস্থ নিরোগ শরীরের অধিকারী হতে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2017, 11:06 AM
Updated : 27 June 2017, 11:06 AM

অনেকে আবার বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলা গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে চাইছেন মাংসহীন বিশ্ব।

মাংসাশী বন্ধুরা যাই বলুন না কেন, নিরামিষভোজীদের কিছু যুক্তি অকাট্য। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে মাংস বাদ দিলে একাধিক সুবিধা মিলবে; আর যত বেশি মানুষ ওদিকে ঝুঁকবে, বৈশ্বিক মাত্রায় এর সুবিধার সংখ্যাও বাড়বে।

কিন্তু বিশ্বের সব মানুষ যদি একসঙ্গে নিরামিষভোজী হয়ে যায়?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, পুরোপুরি মাংসহীন সেই বিশ্ব সর্বাংশে ভালো নাও হতে পারে। 

ভালো যা যা হতে পারে

>> বিশ্বে বর্তমানে গবাদিপশুর সংখ্যা মোটামুটি সাড়ে তিন বিলিয়ন। এর বাইরে কয়েক বিলিয়ন হাঁস-মুরগী প্রতিবছর মানুষের পেটে যায়।

>> ২০৫০ সালের মধ্যে যদি বিশ্বের সবাই মাংস খাওয়া বাদ দেয়, তাহলে বছরে মৃত্যু কমবে অন্তত ৭০ লাখ। আর যদি ডিম ও দুধও খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে এই সংখ্যা ৮০ লাখে দাঁড়াবে।

>> অক্সফোর্ড মার্টিন স্কুলের ফিউচার অব ফুড প্রোগ্রামের গবেষক মার্কো স্প্রিংম্যান বলছেন, মানুষের খাদ্য তালিকা থেকে রেড মিট কমিয়ে দিলেই কমে যাবে মিথেন উৎপাদন। সেক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদনের কারণে দূষণের মাত্রা অন্তত ৬০ শতাংশ কমে আসবে।

>> বিশ্বে মোটামুটি ১২ বিলিয়ন একর জমি খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশ জমি ব্যবহৃত হয় গবাদিপশুর জন্য। আর যে জমিতে কৃষিকাজ হয়, তার এক তৃতীয়াংশ ব্যবহার করা হয় পশুখাদ্যের জন্য। 

>> খাদ্য তালিকা থেকে প্রাণিজ আমিষ বাদ দিলে ওই জমি বেঁচে যাবে। বেঁচে যাওয়া জমির ২০ শতাংশ ব্যবহার করে আরও শস্য উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা যাবে।  বাকি জায়গায় বনায়নের মাধ্যমে কমিয়ে আনা যাবে দূষণের মাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি।

>> মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিলে কমে যাবে হৃদরোগ, বহুমূত্র, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ বেশ কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি।  তাতে হাসপাতালের খরচ কমবে, যা বিশ্বের জিডিপির দুই থেকে তিন শতাংশ সাশ্রয় করবে।

 

উল্টো দিক

>> পৃথিবীর মানুষ হঠাৎ প্রাণিজ আমিষ খাওয়া বাদ দিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক জটিলতা সামলাতে হবে বলে মনে করেন কেমব্রিজের গবেষক বেন ফালান। তবে সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনাতেও ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন না। 

>> উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক এলাকার মানুষ পড়বে বিপাকে, কেননা তাদের আয়ের একটি অংশ আসে পশুখামার থেকে।  সাহারার কাছে সাহেলের মত অনেক এলাকায় পশুচারণ ছাড়া আর কিছুই সম্ভব না। তাদের জীবন বদলাতে গেলে কার্যত তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ও ধ্বংস হবে।

>> পশু উৎপাদন ও প্রজনন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে কৃষি, বনায়ন কিংবা জৈব শক্তি উৎপাদন শিল্পের মতো নতুন নতুন পেশায় নিয়ে যেতে হবে। বিকল্প পেশায় স্থানান্তরের কারণে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেকারত্ব ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

>> সংস্কৃতিতে ধাক্কা আসবে আরও কিছু ক্ষেত্রে। মানুষের ইতিহাসে গবাদিপশু একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। পশু জবাই ছাড়া মুসলমানদের কোরবানির ঈদ, টার্কি ছাড়া খ্রিস্টানদের থ্যাংকসগিভিং ডে কিংবা সাধারণ কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের কথাই কল্পনা করুন।

>> এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পিটার আলেকজান্ডার বলছেন, অনেক এলাকার ভূপ্রকৃতির যে গঠন আমরা এখন দেখি, তা গড়ে উঠেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভেড়ার মত তৃণভোজী পশুচারণের কারণে। সেসব এলাকা থেকে ভেড়া সরিয়ে নিলে পরিবেশের পরিবর্তনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

>> সাধারণত শস্য এবং চালের তুলনায় মাংসে ক্যালরিপ্রতি পুষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে। মাংস বাদ দিলে তার পরিবর্তে অন্য পুষ্টিকর খাবার খাদ্য তালিকায় আনতে হবে। বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ দুইশ কোটির বেশি মানুষ যেখানে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, মাংসহীন বিশ্ব দেখতে চাওয়ার আগে তাদের কথাও ভাবতে হবে।