মেঘের দেশ সাজেক

পাহাড় দেখার শ্রেষ্ঠ সময় বর্ষাকাল। বর্ষা শুরু হতে দেরি হলেও পাহাড়ে বৃষ্টির স্রোতধারা এখন প্রায় নিয়মিত। তাই এইসময়েও ঘুরে আসতে পারেন মেঘের রাজ্য থেকে।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2016, 11:28 AM
Updated : 3 June 2016, 11:28 AM

কম-বেশি বৃষ্টি হচ্ছে পাহাড়ে। আর এমন সময়ে সবুজ পাহাড়ে ডানা মেলেছে মেঘ। কচকচে সবুজের বেষ্টনিতে কেবলি বৃষ্টির বড় বড় ফোটা! ভূপৃষ্ঠ থেকে থেকে প্রায় ১ হাজার ৭শ’ ফুট উপরে হওয়ায় এই সময়ও সারাক্ষণ সাজেক ভ্যালিতে চলে মেঘের নাচন।

বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর রূপ ফুটে বের হয় তার। সাদা মেঘের কুণ্ডলী বিস্তৃত গভীর উপত্যকা থেকে বেয়ে ওঠে। সাদা মেঘে ঢেকে যায় পুরোটা ভ্যালি, এযেন মেঘের উপত্যকা।

দিনের প্রথম পর্বে খাগড়াছড়িতে থেকে রওনা হয়ে প্রথমে যেতে হয় দিঘীনালার পথে। রাস্তার দুপাশে রাবার বাগান। সাজানো সবুজ মিশ্র ফলের বাগান। পাহাড়ের বুকে বসবাস করা আদিবাসীদের বসতি। আঁকাবাঁকা সর্পিল পথের বাঁক পেরোতে পেরোতে স্বাগত জানাবে পাহাড়ি-বৃষ্টি।

যাওয়ার পথে গাড়ি থামিয়ে রাস্তার পাশের দিঘিনালা বন বিহারে একটু ঘুরে দেখাতে পারেন। দিঘিনালার পথ পাড়ি দিয়ে কিছুটা সামনে গেলেই বাঘাইহাট বাজার। বলতে গেলে এখান থেকেই রাঙামাটির সীমানা শুরু।

ছোটখাট ছিমছাম পাহাড়ি বাজার। প্রয়োজনীয় খাবার এখান থেকে কিনে নিতে পারবেন। সময় থাকলে বাজারের আশপাশটা ঘুরে দেখবেন।

বাঘাইহাট বাজার ছেড়ে যেতেই বড় বড় সব পাহাড়ি রাস্তা। ‘চাঁন্দের গাড়ি’র ছাদে বসে মনে হবে এই যেন রোলার কোস্টার। এক পাহাড় থেকে নেমে তীব্র গতিতে উঠতে হয়ে আরেকটি পাহাড়ে। দুপাশে তাকালে চোখে পড়বে কেবল সবুজ আর সবুজ। বৃষ্টিতে ন্যাড়া পাহাড়েও সবুজের সমারোহ। কাছে বা দিগন্তের পাহাড়গুলো অঝোর ধারার বৃষ্টির সৌন্দর্যরূপ গাড়ির ছাদ বসেই উপভোগ করা যায়। ঘনবৃষ্টিতে পাহাড়ে খুব বেশি দূর দেখাও যায় না।

বাঘাইহাট থেকে ছোট-বড় পাহাড় ডিঙিয়ে বৃষ্টি আর মেঘমল্লার সঙ্গে পৌছাতে হয় মাচালং বাজারে। এর পরেই শুরু হয় সাজেকের প্রধান পথ।

অসংখ্য পাহাড়ের বন্ধনে সবুজে ঢাকা অপরূপ সাজেকের রাস্তা! বৃষ্টিতে সবুজে ঢাকা এই পথ আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কালো মেঘ বারবার হাতছানি দেয় বৃষ্টি। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে প্রায়শ। দারুণ বৃষ্টিমুখরে খুঁজে পাবেন সাজেকের প্রকৃত সৌন্দর্যরূপ।

সবুজ পাহাড়ের চূড়া ঘিরে রয়েছে সাদা মেঘের আবরণ। দিগন্ত বিস্তৃত উপত্যকা মিশে গেছে মিজোরামের নীল পাহাড়ে (ব্লু ম্যাউনন্টেইন)। বর্ষায় সাদা তুলোর মতো ছোট ছোট মেঘের স্তুপ ভেসে বেড়ায় পাহাড়ের বুকে। উপত্যকার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হবে এই কি অপার্থিব সৌন্দর্য!

সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের হাঁটা পথে কংলাক চূড়া। সাজেকের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম কংলাক পাড়া। পাড়া থেকে পাখির চোখের মতন দেখা যাবে পুরোটা মেঘের রাজ্য।

বিশাল পাথর খণ্ডের কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা এই পাড়ায় আদিবাসী লুসাইদের বসবাস।

বৃষ্টির পর সাজেকের অন্যরূপ দেখা যায় এই পাড়া থেকে। সাদা মেঘে ঢেকে যাওয়া রুইলুই পাড়া, পাইলিং পাড়া ও সাজেক ভ্যালির পাহাড় চূড়া। বর্ষায় মেঘের দল আপনাকেও ভিজিয়ে দেবে। পাহাড়ের আকাশে মেঘের পেখম থেকে অঝোর ধারায় নামে বৃষ্টির স্রোতধারা। বৃষ্টির পরে মিষ্টি রোদে নৈর্সগিক সাজেকে ডানা মেলে রংধনুর সাত রং!

কীভাবে যাবেন: সাজেকের অবস্থান রাঙামাটিতে হলেও যেতে হয় খাগড়াছড়ি শহর হয়ে।

ঢাকা থেকে ননএসি বা এসি বাসে সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। প্রতিদিন শান্তি পরিবহন, শ্যামলী, এস.আলম, সেন্টমার্টিন পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস খাগড়াছড়িতে যাতায়াত করে।

তাছাড়া রাঙামাটি থেকে লঞ্চ করে লংগদু বা বাঘাইছড়ি হয়ে সাজেক পৌঁছানো যায়।

প্রয়োজনীয় তথ্য: সাজেক, খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে। সাজাকে রাতযাপনের সুযোগ সীমিত। তাই এখানে ভ্রমণের আগে অবশ্যই সাজেকে রুম বুকিং এবং যাতায়াতের ‘চাঁন্দের গাড়ি’ নিশ্চিত করতে হবে।

সাজেকের বাঘাইহাট থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় এবং বিকাল তিনটায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় সাজেকে পর্যটক আসা-যাওয়া করে। তার আগে-পরে কোনো পর্যটক আসা যাওয়া করতে পারে না।

তাছাড়া সাজেকের পাহাড়ি রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে স্থানীয় ‘চাঁন্দের গাড়ি’(জিপ) বা পিকআপে যাতায়াত করাই ভালো।

প্যাকেজে সাজেক ভ্রমণ:
দীর্ঘদিন ধরে সাজেকে নিয়মিত ভ্রমণ প্যাকেজ পরিচালনা করছে স্থানীয় ভ্রমণ সংস্থা সিএইচটি ট্র্যাভেলস। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি বাসে যাতায়াত, খাবার, সাজেক-খাগড়াছড়ির বিভিন্ন ভ্রমণ স্পটে বেড়ানো— তিন রাত দুই দিনের সাজেক প্যাকেজে সব মিলিয়ে খরচ পড়বে জনপ্রতি ৪ হাজর ৫শ’ টাকা। যোগাযোগ ০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭। ০১৫৫৬-৭১০০৪৩।