লিচুর জন্য বিখ্যাত দেশের তিনটি জায়গায় ভ্রমণ তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন।
সোনারগাঁওয়ের লিচু
ঢাকার কাছে লিচুর জন্য বিখ্যাত জায়গা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও। এখানকার বেশিরভাগ বাগানের লিচুতে এরইমধ্যে লাল আভা ছড়িয়েছে।
তবে টানা তাপদাহ আর বৃষ্টির কারণে এবারের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সোনারগাঁওয়ের লিচু সবার আগেই বাজারে আসে। এখন বাগানে বাগানে তাই চাষীদের ব্যস্ততাও বেড়েছে।
সোনারগাঁও উপজেলা সদর এবং আশপাশের প্রায় ১০টি ইউনিয়ন জুড়ে আছে লিচুর বাগান। মোগরাপাড়া থেকে সোনারাঁও ডিগ্রী কলেজ এসে সেখান থেকে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের দিকের সড়কটির দুই পাশেই আছে প্রচুর লিচু বাগান। অনুমতি নিয়ে যে কোনো বাগানে ঢুকে কিনে খেতে পারেন লিচু।
সোনারগাঁওয়ের লিচু বাগানগুলোতে প্রধানত ফলন হয় কদমী ও বোম্বাই জাতের লিচু। তবে বর্তমান সময়ে চায়না থ্রি, মোজাফফরপুরী, এলাচি ও বাদামি জাতের লিচুও চাষ হচ্ছে প্রচুর।
কদমি প্রজাতির লিচু সবচেয়ে আগে পাকে। তাই এই এলাকা বেশি চাষ করা হয়।
সোনারগঁওয়ের লিচু বাগান দেখার জন্য ঘুরতে পারেন ভরত, পানাম, টিপরদী, খাসনগর, মনারবাগ, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, কৃষ্ণপুরা, গোবিন্দপুর, দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, গোয়ালদী, হরিষপুর, ভট্টপুর, গাবতলী, হারিয়া, বৈদ্যেরবাজার, তাজপুর, সাদীপুর, ইছাপাড়া, দুলালপুর, বারদী, সেনপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায়।
এসব এলাকায় তিন শতাধিক লিচুবাগান রয়েছে। সোনারগাঁওয়ের বাগানে বেড়ানোর জন্য সময় হল মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত।
ঈশ্বরদীর লিচু বাগান
লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত পাবনা জেলার ঈশ্বরদী। বৃষ্টির অভাবে এবছর ঈশ্বরদীর লিচু ফলনেও প্রভাব ফেলেছে। এরইমধ্যে এখানকার বাগানগুলোতে লিচুতে পাক ধরতে শুরু করেছে। তবে ঈশ্বরদীর লিচুর মূল সময় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ।
নাটোরের বনপাড়া ছেড়ে পাবনার সড়কে ঢুকলেই দেখা যাবে লিচু বাগান। অনুমতি নিয়ে যে কোনো বাগানে ঢুকে পড়তে পারেন। এখানকার চাষীরা বেশ অতিথি পরায়ণ। এ সময়ে গেলে অতিথিদের লিচু দিয়ে আপ্যায়নে না করিয়ে ছাড়েন না তারা। এখানকার বাগানে লিচুর দামও বাজারের থেকে অনেক কম।
ঈশ্বরদীর লিচু চাষের প্রধান এলাকাগুলো জয়নগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, মানিকনগর, ছলিমপুর, সাহাপুর, ভাড়ইমারী, জগন্নাথপুর, বক্তারপুর, বড়ইচড়া, শিমুলচড়া ইত্যাদি।
এসব এলাকার তিন হাজারেরও বেশি হেক্টর জামিতে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হয়।
ঈশ্বরদীতে বেদানা, বোম্বাই, চায়না-১, মোজাফফরপুরী, বারী-১সহ বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বোম্বাই জাতের লিচু।
লিচু বাগানে বেড়ানোর জন্য ঈশ্বরদীর সবচেয়ে ভালো জায়গা ছলিমপুর আর মিরকামারী। মহাসড়কের পাশের এই গ্রামগুলোর সবজায়গাতেই লিচু বাগান।
যাতায়াত ও থাকা: ঢাকা থেকে বাসে ও রেলে ঈশ্বরদী যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে ঈশ্বরদী এক্সপ্রেস, পাবনা এক্সপ্রেস ও সনি এক্সপ্রেসে চড়ে যেতে পারেন ঈশ্বরদী। এসব বাসে ভাড়া ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর থেকে বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন যায় খুলনা। শ্রেণি ভেদে ভাড়া ২৪৫ থেকে ৮৮০ টাকা।
এ ভ্রমণে থাকতে চাইলে ঈশ্বরদীতে থাকা ভালো। এখানে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশে আছে হোটেল ফয়সাল, ঈশ্বরদী ও উত্তরা। এসব হোটেলে ২৫০ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায় থাকা যায়।
এছাড়া একটু খরচ করে থাকতে চাইলে ঈশ্বরধীতে আছে পাকশী রিসোর্ট।
দিনাজপুরের লিচু
লিচুর জন্য দিনাজপুর বিখ্যাত। বহুকাল ধরেই এ অঞ্চলে লিচুর চাষ হয়ে আসছে। এখানকার লিচু আকার আর স্বাদে অনন্য। কিছু দিনের মধ্যেই সেখানকার গাছে লিচু পাকতে শুরু করবে।
দিনাজপুর জেলার সর্বত্রই প্রচুর লিচুর চাষ হয়। তবে জেলা সদরের মাশিমপুর লিচুর জন্য অনন্য এক জায়গা। এ এলাকার লিচু গাছগুলো বয়সেও প্রবীণ।
দিনাজপুর শহর থেকে রামসাগরের দিকে চলে যাওয়া সড়কটি ধরে সামনের দিকে কিছুক্ষণ চলার পরেই মাশিমপুর। এই রাস্তার দুইপাশে প্রচুর লিচু গাছ। প্রধান সড়ক ছেড়ে কোনো মেঠো পথে ঢুকে পড়ুন। চোখ ধাঁধিয়ে যাবে নি:সন্দেহে।
মাশিমপুর এ সময়ে দেখা যাবে সড়কের দুই পাশে ছেলে মেয়েরা সদ্য পেড়ে আনা লিচু নিয়ে বসেছে বিক্রির জন্য। দূর-দূরান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাওয়া যাবে বিভিন্ন আকারের বাঁশের তৈরি ঝুঁড়িও।
মাশিমপুর এলাকার বাড়ির অঙিনা এবং আশপাশেই লিচুগাছ বেশি। ভ্রমণে গেলে এখানেও আতিথেয়তায় কমতি থাকেনা।
এখানে লিচু বাগানে ভ্রমণ ছাড়াও দেখতে পাবেন বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য দুটি প্রাচীন স্থাপনা। এর একটি কান্তজিউ বা কান্তনগর মন্দির এবং অন্যটি নয়াবাদ মসজিদ।
যাতায়াত ও থাকা: ঢাকা থেকে রেল ও সড়কপথে সরাসরি দিনাজপুর যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সপ্তাহের মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টায় একতা এক্সপ্রেস, বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে দ্রুতযান এক্সপ্রেস যায় দিনাজপুর। দিনাজপুর থেকে বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে দ্রুতযান এক্সপ্রেস এবং সোমবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে একতা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। শ্রেণি ভেদে ভাড়া ৩৯০ থেকে ১ হাজার ৩৯০ টাকা।
ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে নাবিল পরিবহনের এসি বাস যায় দিনাজপুর। ভাড়া ১ হাজার ৪শ’ টাকা।
এছাড়া এ পথে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস, কেয়া পরিবহন, এসএ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের নন এসি বাসও চলাচল করে। ভাড়া ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল।
এছাড়াও শহরের মালদহ পট্টিতে আছে হোটেল ডায়মন্ড, নিমতলায় হোটেল আল রশিদ, হোটেল নবীন, হোটেল রেহানা ইত্যাদি। এসব হোটেল ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকায় কক্ষ পাওয়া যাবে।