‘মৈত্রী; দা বন্ডেজ’

ভারত–বাংলাদেশের শিল্পীদের ছাপাই ছবির প্রদর্শনী

শরীফ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2015, 11:45 AM
Updated : 27 August 2015, 11:45 AM

শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনের পাঁচ নম্বর গ্যালারিতে চলছে ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীদের দলীয় ছাপাই ছবির প্রদর্শনী। এমনিতে ছাপাই ছবির চেয়ে চারুকলার এই শাখা ‘প্রিন্ট মেকিং’ নামেই বেশি পরিচিত। অবশ্য ইংরেজি নামের এই আধিপত্যের একটা ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়।

মূলত ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসন শেষ হওয়ার পর, স্বাধীনভাবে ছাপাই ছবির চর্চা শুরু হয় ভারতীয় উপমহাদেশে। এর আগে, বিভিন্ন মাধ্যমে করা ছবি পুনরুৎপাদনের জন্যই এই কৌশল ব্যবহার করা হত।

অবশ্য ব্রিটিশদের আধিপত্য শেষ হওয়ার আগেই নন্দলাল বসুর কাজে, ছাপাই ছবির স্বাধীন শিল্পচর্চার মাধ্যম হয়ে উঠবার সম্ভাবনা ফুটে উঠে। এর কারণ হতে পারে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকেই পশ্চিম বাংলায় গড়ে ওঠা শান্তিনিকেতন। তবে এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দিন আহমেদরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। কলকাতায় প্রশিক্ষণ পেলেও, ১৯৪৮য়ে তৎকালীন সরকারী আর্ট কলেজ বা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই শিল্পের বিকাশ ঘটতে শুরু করে বাংলাদেশে।

ঢাকার সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমিতে বুধবার ২৬ অগাস্ট শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী দুই বাংলার ছাপাই ছবির ঐতিহাসিক এই মেলবন্ধনেরই এক অসাধারণ নিদর্শন।

মূলত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্ট মেকিং বিভাগ ও বিশ্বভারতীর গ্রাফিক আর্ট বিভাগের মধ্যে শিক্ষা ও শিল্প বিনিময় প্রকল্পের আওতায় এই আয়োজন করা হয়েছে।

প্রকল্পের অংশ হিসেবে অবশ্য গেল ডিসেম্বরেই শান্তিনিকেতন ঘুরে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী প্রতিনিধিরা। এবার ফিরতি যাত্রায় এসেছেন বিশ্বভারতীর প্রতিনিধিরা। আয়োজনের অংশ হিসেবে দুই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিন্ট মেকিংয়ের এক কর্মশালায়ও অংশ নিচ্ছেন।

বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত অপ্রচলিত ‘সায়ানোটাইপ’, ‘ভিসকোসিট’ এবং ‘ফটো লিথোগ্রাফি’র মতো প্রিন্ট মেইকিং পদ্ধতির উপর আয়োজন করা হয়েছে এই কর্মশালার। ভারতের অর্পন মুখার্জি ও প্রশান্ত ফিরিঙ্গি সায়ানোটাইপ, উত্তম কুমার বসাক ভিসকোসিটি ও অজিত শীল কর্মশালা নিচ্ছেন ফটো লিথোগ্রাফির উপর।  

শিল্পকলার এই প্রদর্শনীতে অবশ্য কর্মশালার কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে না। বরং দুই বাংলার বাছাইকৃত ৭৭ জন শিল্পীর কাজ দেখা যাবে এই আয়োজনে। যেখানে বাংলাদেশের ৪৩ জন ও ভারতের ৩৪ জন শিল্পী প্রত্যেকের এক বা একাধিক কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে। শিক্ষকদের সঙ্গে একই গ্যালারিতে কাজ দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন তাদের ছাত্র-ছাত্রীরাও।   

এমন আয়োজন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ঢাকা বিশববিদ্যালয়ের প্রিন্ট মেকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান বলেন, “এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে মূলত লাভবান হবে নবীন শিল্পীরা। কারণ শিল্পচর্চায় এদেশের শিক্ষকেরা কিংবা অভিজ্ঞরা দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পান, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সেরকম সুযোগ অনেকটাই সীমিত। সুতরাং এমন একটা উদ্যোগ যেমন নতুনদের অপরিচিত সব মাধ্যম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করছে, ঠিক তেমনি অন্য সংস্কৃতিতে কী ধরনের চর্চা চলছে তা সম্পর্কে জানতেও সাহায্য করবে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে হয়ত একেবারে ঠিকভাবে করা সম্ভব হয়নি, তবে দারুণ একটা উদ্যোগের সূচনা হয়েছে নিশ্চয়ই।”

‘মৈত্রী; দা বন্ডেজ’ শিরোনামের এই প্রদর্শনী প্রতিদিন দুপুর ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত। অবশ্য শেষদিন শুক্রবার ২৮ অগাস্ট প্রদর্শনী চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ।