শরীরভরা বিদ্যুত যাদের

তোমার চারপাশে রোজ কত প্রাণীই তো ঘোরাফেরা করে। সেই ছোট্ট পিঁপড়া থেকে শুরু করে ইয়া বড় হাতি পর্যন্ত। ওদের কেউ থাকে খাঁচার বাইরে, তোমার চারপাশে। অথবা পানিতে। আর কেউ থাকে চিড়িয়াখানায়।

>> সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2014, 10:33 AM
Updated : 1 July 2014, 10:33 AM

খাঁচার মধ্যে বা অ্যাকুরিয়ামে। ওদের কেউ কেউ বেশ শান্ত। আদর করলেই পোষ মেনে যায়। আর পোষ না মানলেও সবসময় চুপচাপ গুটিগুটি হেঁটে নিজের কাজে চলে যায়। একদম বিরক্ত করে না তোমাকে। মাঝেমধ্যে ভুল করে যদি গায়ে বসেও পড়ে, একটু রাগী চোখে তাকালেই সঙ্গে সঙ্গে চলেও যায়।

কিন্তু ওরা ছাড়াও তোমার চারপাশে আছে আরও অনেক প্রাণী, যারা একদম এদের উল্টো। সারাক্ষণ তোমার সঙ্গে কোনো না কোনো ঝামেলা বাঁধানোরই যেন সুযোগ খোঁজে ওরা। অনেক বড় ওদের নামের লিস্টি। সেখানে আছে ছোট্ট মশা থেকে শুরু করে বড়বড় টাইগারও। তাই তো তোমার মা-বাবাও সবসময় খেয়াল রাখেন ওই ভয়ঙ্কর প্রাণীগুলো যেন তোমার ধারেকাছে না আসে।

কিন্তু ওরা আর কি এমন ভয়ঙ্কর? ওরা তো কেবল তোমাকে খানিকটা কামড়েই দেয়। কিন্তু ওদের চাইতেও ভয়ঙ্কর স্বভাবের আরেক ধরনের প্রাণী আছে যারা কিনা কামড়ায় না। বরং বৈদ্যুতিক শক লাগিয়ে দেয় মানুষের শরীরে।

ভাবছ এমনটা কী করে হয়? কোনো প্রাণী কীভাবে কাউকে বৈদ্যুতিক শক দিতে পারে? ওটা তো কেবল কারেন্টে হাত লেগে গেলেই হয়। সত্যিই! কারেন্টে কোনোভাবে হাত লেগে গেলেই বৈদ্যুতিক শক লাগে। বিদ্যুত এসে ধাক্কা দিয়ে যায় শরীরে।

মজার ব্যাপার হল ওই প্রাণীগুলোও কিন্তু কারেন্ট ব্যবহার করেই মানুষকে বিদ্যুতের ধাক্কা দেয়। কী ভাবছ? ওরা কারেন্ট পায় কোথায়? কোথায় আবার! কারেন্ট ওদের শরীরেই তৈরি হয়। পানির নিচে বসবাস করা প্রাণীদের মধ্যে এমন ছয় প্রজাতির মাছ আছে যাদের শরীরে ইলেক্টরোসাইটস নামের এক ধরনের কোষ থাকে। আর সেই কোষ থেকেই ওরা তৈরি করে বিদ্যুত। অবাক হচ্ছ? অবাক হওয়ার মতনই ব্যাপার। আর তোমাকে অবাক করে দিল এমন কয়েকটা বৈদ্যুতিক প্রাণীর কথা নিচে বলা হল।

বৈদ্যুতিক ইল

ইল এক রকম মাছ। বৈদ্যুতিক ইলগুলো সত্যিকারের ইল মাছ নয়। কেবল নামেই এদের ইল বলে ডাকা হয়। অন্যান্য বৈদ্যুতিক মাছের মতো এই ইলগুলোর দেহেও আছে বিদ্যুত তৈরি করার ক্ষমতা। আর সবার চাইতে অনেক বেশি মাত্রার বিদ্যুত তৈরি করতে পারে এই ইলেরা তাদের শরীরে।

একটা ইল সর্বোচ্চ ৮ ফুট লম্বা এবং ৫০ পাউন্ড ওজনের হতে পারে। এই ইলগুলোর অতিরিক্ত শকে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এলিফেন্ট নোজ ফিশ

এদের সামনের দিকটা দেখতে হাতির নাকের মতো হলেও ওটা আসলে ওদের নাক নয়। ওটা থুতনি বা চিবুক। আফ্রিকায় বাস করা একধরনের মাছের সমগোত্রীয় বলে মনে করা হয় এদের। ওদের চিবুকটা ইয়া লম্বা হলেও চোখে দেখার ক্ষমতা খুব কম। আর তাই খাবার জোগাড় করার জন্য প্রকৃতি ওদের দিয়েছে শরীরভরা বিদ্যুত। বিদ্যুতের মাধ্যমেই ওরা নিজেদের খাবার জোগাড় করে নেয়। বিদ্যুতের সঙ্গে সঙ্গে ওদের আছে এক মাথা বুদ্ধিও। তাই তো বিরক্ত হলেই ওরা খেলতে শুরু করে চারপাশের নানা জিনিসের সঙ্গে।

প্লাটিপাস

প্লাটিপাসেরা রাতের বেলায় চোখ, কান, মুখ সব বন্ধ করেও শিকার করতে পারে। কিন্তু কীভাবে? অনেকদিন ধরেই এমনটা ভাবছিল বিজ্ঞানীরা। শেষমেশ তাদের ভাবনার অবসান হল যখন জানা গেল প্লাটিপাসের গায়ে আছে বিদ্যুত আর সেই বিদ্যুতের সাহায্যেই সে শিকার করে।

হাঙর

হাঙরের গায়ে আছে বৈদ্যুতিক তরল ভরা হাজার হাজার লোমকূপ। সাধারণত নিজেদে খাবার খুঁজে বের করতে ওরা এই বিদ্যুত ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে বালিতে লুকিয়ে থাকা শিকারকেও ওরা সহজেই বের করে ফেলতে পারে।

বৈদ্যুতিক রে

সাগরের নিচে থাকা এমন ৬৯ রকমের রে মাছ আছে যারা কিনা শিকারের সময় নিজেদের দেহে বিদ্যুত ব্যবহার করে। তবে আকারের উপর নির্ভর করে কোন রে মাছের বিদ্যুতের মাত্রা কতটা হবে। ছোট রে মাছের ক্ষমতা থাকে অল্প আর বড়গুলোর বেশি। শিকার করা ছাড়াও যোগাযোগ করতে, বন্ধুকে খুঁজে বের করতে এবং আরও অনেক কাজে রে মাছ নিজেদের দেহের বিদ্যুত ব্যবহার করে।

উজ্জ্বল হর্নেট

হর্নেট মাছের দেহেও তাকে বিদ্যুত। আর এই বিদ্যুত তারা পায় সূর্য থেকে। এই মাছের শরীর খুব সহজেই সূর্যের আলোকে বিদ্যুতে রুপান্তর করে নিজেদের দেহে ঢুকিয়ে নিতে পারে। এদের দেহে আছে দুই ধরনের দাগ। বাদামি আর হলুদ। বাদামি দাগগুলো সূর্যের আলো নিতে আর হলুদ দাগুলো সেই আলোকে বিদ্যুৎ বানাতে সাহায্য করে।