পৃথিবীর সুন্দর আর উদ্ভট সেতু

সাধারণভাবে শুধু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পারাপারের জন্যই সেতুর প্রয়োজন হয় মানুষের। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পারাপার করা ছাড়াও নান্দনিক শিল্পকর্ম হয়ে উঠতে পারে তার কোনো কোনোটি।

>> নবনীতা সেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2013, 12:30 PM
Updated : 22 Dec 2013, 02:58 AM

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য সুন্দর সেতুর খোঁজ পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত। বিভিন্ন পর্যটন কর্পোরেশনের কল্যাণে পৃথিবীর অজানা প্রান্তেও পাওয়া গেছে অনিন্দ্য সুন্দর সেতুর খোঁজ। তারই মধ্যে বাছাইকৃত ছয়টি সেতুর বর্ণনা দেওয়া হল আজ--

ক) ল্যান্ডস্ক্যাপ

সেতু যে অন্যতম সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে তার প্রমাণ জার্মানির ক্রমলোউতে অবস্থিত রেকটজ ব্রিজ নামের সেতুটি। ১৮৬০ সালে জার্মানির  ক্রমলোউর ক্রমলোয়ার পার্কে বানান হয় পাথরের এই সেতুটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সংস্কারকৃত ব্যাসাল্ট পাথরে বানানো সেতুটি এখন পর্যটনের একটি জনপ্রিয় স্থান হিসেবে পরিচিত। 

খ) আকাশ ছিঁড়ে ফেলা সেতু

মালয়েশিয়ায় অবস্থিত ল্যাংকাউই স্কাই ব্রিজ নামের সেতুটিকে দেখলে হঠাৎ তা আকাশকে ছিঁড়ে ফেলেছে বলে মনে হয়। পলো ল্যাংকাউই দ্বীপের গুনুং ম্যাট সিঙ্কেঙ্ক পাহাড়ের উপরের ১২৫ মিটার লম্বা ঝুলন্ত সেতুটিকে এমনভাবেই বানিয়েছেন স্থপতি মায়ুর কানাইয়া। সেতুটি নিয়ে কানাইয়া বলেন, “মানুষকে একই সঙ্গে বন্যজীবনের সৌন্দর্য আর উন্মত্ততার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে ঝুলন্ত সেতুটি।”

গ) প্রাকৃতিক সেতু

ইট, মর্টার আর কাঠের পরিবর্তে শুধু গাছের শিকড় দিয়ে নির্মিত হয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি গ্রামের সেতুগুলো। বিশ্বের বৃষ্টিবহুল এলাকা হিসেবে পরিচিত জায়গাটি। গ্রামের যুদ্ধজাতি খাসিস অনেকদিন আগে গাছের শিকড় দিয়ে এ ধরনের সেতু নির্মাণের কৌশল আবিষ্কার করে। তারা গাছের শিকড়কে এমনভাবে বাড়তে দেয়, যাতে করে তা নির্দিষ্ট দিকে বাঁকতে গিয়ে সেতুর নির্মাণ করে। পারাপারের সময় স্থানীয়রা ভারসাম্য বজায় রাখতে হাতে একটি বাঁশ ব্যবহার করে। স্থানীয়দের মতে সেতুগুলোর কোনো কোনোটি লম্বায় ৩০ মিটার এবং একবারে তাতে ৫০ জন মানুষের ভার সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে।   

ঘ) ভূগর্ভস্থ সেতু

বাকি সেতুগুলো যখন পানির উপর নির্মিত সেখানে হালস্টেরেন গ্রামের ভূগর্ভস্থ সেতুটি তার ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে। স্থাপত্য বিদ্যার শিক্ষার্থী য়ু ঝুয়য়ি সেতুটি বানানোর দায়িত্বে ছিলেন। সেতুটি বানানোর সময় ঝুয়য়ি সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করেন। সেতুটির দেওয়াল অনেকটা পানিতে দেওয়া বাঁধের মতো ফলে নদীর পানি সবসময় এটি থেকে দূরেই থাকে।   

ঙ) লন্ডনের অ্যাক্রবেট

অন্যদিকে লন্ডনের প্যাডিংটন বেসিনের গ্র্যান্ড ইউনিউন ক্যানালের উপর নির্মিত ১২ মিটার লম্বা রোলিং সেতুটি নৌকা পারাপারের সময় একদিকে ভাঁজ হয়ে থাকে। বেলজিয়ামের এক শিল্পপতি কিওন কাস বলেছেন, আটটি স্টিল আর কড়িকাঠের তৈরি সেতুটি দুধার মিলিত না হওয়া পর্যন্ত অষ্টভুজ আঁকারে ভাজ করা থাকে। প্রতি শুক্রবার দুপুর বেলায় পর্যটকদের জন্য সেতুটির অ্যাক্রোবেটিক্স প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়।   

চ) পাথরের সেতু

ইয়েমেনের সাহারা সেতুটি নির্মিত হয়েছে পুরোপুরি পাথর দিয়ে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আচিলিস ভোর্টসেলাসের পাথরের সেতুর প্রতি রয়েছে অন্যরকম আগ্রহ। তার মতে বর্তমান কোনো প্রযুক্তিই পাথরের সেতুর সমতুল্য নয়। পাথরের সেতুগুলো বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বিভিন্ন প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার সাক্ষর বহন করে বলে জানিয়েছেন ভোর্টসেলাস। আর সাহারা সেতুটি তার মধ্যে অন্যতম।