রাখাল ও জাদুর আম গাছ

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2013, 00:01 AM
Updated : 9 Jan 2013, 00:01 AM

[হুমায়ুন কবীর ঢালীকে চেনো তো? তোমাদের জন্য বেশ অনেকগুলো বই লিখেছেন তিনি। যেমন ধরো, ‘দুষ্ট ছেলের গল্প’, ‘টিয়ে পাখির জন্মদিনে’, ‘শাটুস কুটুস’, ‘নীল গ্রহের রহস্য’, ‘লেজকাটা বাঘ ও রাজকন্যা’, ‘রাখাল ও জাদুর আম গাছ’, ‘কাকের ছা কঙ্কাবতী’, ‘সওদাগর ও ডাইনীবুড়ি’ প্রভৃতি।

বইগুলোর মধ্যে, ‘রাখাল ও জাদুর আম গাছ’ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৭ সালে, বাংলাপ্রকাশ থেকে। আবার বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের অগাস্টে, বাংলাপ্রকাশ থেকেই,  "A Cowbay and A Magic Mango Tree" নামে; অনুবাদ করেন ফারোহা সোহরাওয়ার্দী। এখন, হঠাৎ করে সেই বইটির গল্প কেন বলছি? বলছি এজন্য যে, বইটি এখন গ্রিসের একটি স্কুলে পড়ানো হচ্ছে!

গ্রিসে হুমায়ুন কবীর ঢালীর এক বন্ধু আছেন, নাম স্টেফানো আয়োনাইডিস। তিনি গ্রিসের পেল্লা প্রদেশের ইয়ানিৎসা নামের একটি জায়গার নাইন্থ স্টেট প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তিনি যখন শুনলেন, হুমায়ুন কবীর ঢালী তোমাদের মতো ছোটদের জন্য লেখেন, আর তার কয়েকটি বই ইংরেজিতে অনূদিতও হয়েছে, তখন ভাবলেন- বইগুলো পড়েই দেখা যাক না। আর পড়ার পর, ‘রাখাল ও জাদুর আম গাছ’ বইটা তার এতো ভালো লেগে গেল, চিন্তা করলেন বইটা তার স্কুলে ছোটদেরকে পড়াবেন।

কিন্তু চাইলেই তো আর সেটা স্কুলে পড়ানো যাবে না। তিনি তার স্কুলের মাধ্যমে গ্রিসের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠালেন, বইটা তিনি স্কুলে পড়াতে চান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তখনি অনুমতি দিয়ে দিল না, তারা আগে ছোটদেরকে বইটা পড়িয়ে তাদের মতামত নিল। তারপর হুমায়ুন কবীর ঢালীর সঙ্গে ছোটদের একটা ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থাও করলো। সেই কনফারেন্সে বাচ্চারা লেখককে বইটি সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করলো। লেখকও তার মতো করে সেগুলোর জবাব দিলেন। সবশেষে, গ্রিসের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঠিক করলেন, হ্যাঁ, বইটা স্কুলে পড়ানো যেতে পারে।

পড়ানোর অনুমতি তো মিললো। এরপর আরেকটা সমস্যাও কিন্তু হয়েছিল। গ্রিসের সঙ্গে তো বাংলাদেশের তেমন বই লেনদেন হয় না। তাই কেউ এই দুই দেশের মধ্যে বই আনা-নেওয়াও করে না। এখন স্কুলের বাচ্চাদের জন্য বই পাঠানো হবে কীভাবে? কুরিয়ার করে পাঠাতে গেলে যে অনেক টাকা লেগে যাবে; একটি-দু’টি বই তো আর নয়! এদিকে সময়-ও তো নেই, পড়া শুরু করতে হবে। শেষমেশ ওই কুরিয়ার-ই করতে হলো। লেখক কয়েকটি বই কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিলেন স্কুলটিতে। আর স্কুল বইগুলো ফটোকপি করে বাচ্চাদেরকে দিল। আপাতত এভাবেই চলছে; হয়তো শিগগিরই সবার জন্য বই পাঠানোর ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

এই ফাঁকে তোমাদের আরেকটি কথা জানিয়ে রাখি। হুমায়ুন কবীর ঢালীর আরো একটি বই ভারতের উড়িষ্যা প্রদেশের সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলোর লাইব্রেরিতে রাখা আছে। আর সেগুলো প্রাদেশিক সরকারেরই সরবরাহ করা। হুমায়ুন কবীর ঢালীর এই বইটি হচ্ছে, ‘কাব্য ও এঞ্জেলের বন্ধুরা’।

এবার তাহলে গল্পটা পড়েই ফেলো। তবে মূল বইতে কিন্তু গল্পের সঙ্গে পৃষ্ঠা জোড়া সুন্দর সুন্দর সব ছবি আঁকা আছে। ছবিগুলো এঁকেছেন মামুন হোসাইন। আর বইটি যে বাংলাপ্রকাশ প্রকাশ করেছে, সে তো আগেই বলেছি। বইটি যদি এখন খুঁজে নাও পাও, বইমেলাতে তো পাবেই]

এক গরিব রাখাল ছেলে। মাকে নিয়ে তার ছোট সংসার। সে খুবই সরল ও সৎ। সে মাঠে মাঠে গরু চরায়। তার নিজের কোনো গরু নেই। অন্যের গরু নিয়ে সারাদিন মাঠে থাকে।

বিকেল হলে ঘরে ফিরে। মা যা দেয় তাই খেয়ে নেয়। কোনো কথা বলে না। বায়না ধরে না। খেয়ে দেয়ে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।

একদিন রাখালের মা বলল, ‘বাবা, আর কত দিন অন্যের গরু চরাবি? এবার নিজে একটা গরু কিন।’

মায়ের কথা শুনে রাখাল ছেলে খুব খুশি হয়। খুুশি হয়ে রাখাল তার মাকে বলল, ‘বেশ, তুমি যখন গরু কিনতে বলেছ- আমাকে গরু কিনতেই হবে।’ ছেলের কথায় মা-ও খুশি হল।

পরের দিন মাঠের পাশে এক আম গাছের নিচে গিয়ে বসল রাখাল। বসে কী করে একটা গরু কেনা যায় তা ভাবল। তখনি আম গাছ থেকে একটা আম পড়ল। রাখাল আমটা কুড়াল। ওর ভিষণ ক্ষুধা পেয়েছিল। তাই আমটা খেতে চাইল।

রাখাল মুখের কাছে তুলে ধরল আমটা। আমটায় কামড় বসাল। আমটা ছিল খুব টক। তাই এক কামড় খেয়েই রাখাল আমটা ফেলে দিল।

এই দেখে আম গাছটা কষ্ট পেল। বলল, ‘রাখাল আমার আমটা ফেলিস না। খেয়ে নে।’

আম গাছের কথায় রাখাল ফের আমটা হাতে নিল।

রাখাল বলল, ‘তোমার আম খুব টক। খাওয়া যায় না।’

আম গাছ বলল, ‘তা আমি জানি। তুই আমার আমটা খা। তোকে অনেক হীরে দেব, মুক্তা দেব।’

আম গাছের কথা রাখালের বিশ্বাস হল। সে টক আমটা খেল। খেয়ে বলল, ‘এবার আমাকে হীরে দাও, মুক্তা দাও।’

আম গাছ বলল, ‘আমার ডানপাশটায় মাটি খুঁড়ে দেখ। সাতটা সোনার কলস দেখতে পাবি। কলসগুলো হীরে-মুক্তোয় ভরা।’

রাখাল ছেলে আম গাছের ডানে খুঁড়ল। খুঁড়ে সত্যি সত্যি বড় বড় সাতটি কলস পেল। সবগুলো তুলে আনল। রাখাল দেখল সত্যি সত্যি কলসগুলো হীরে-মুক্তোয় ভরা। কলসগুলো পেয়ে রাখাল খুব খুশি হল।

আম গাছ বলল, ‘এবার শোন আমার আম কেন টক। মিষ্টি হলে সবাই এসে আমার আম খেত। হাতের লাঠি দিয়ে মাটিতে খোঁচা দিত। এক সময় হয়ত হীরার খোঁজ পেয়ে যেত। আমি চাইনি এসব অসৎ লোকদের হাতে যাক।

এসব হীরে-মুক্তো ওরা হিসেব করে খরচ করত না। তুই সহজ-সরল মানুষ। তুই অন্যের গরু চরিয়ে দিন কাটাস। তোর দুঃখ আমাকে কষ্ট দেয়। তাই তোকেই হীরে-মুক্তো দিয়ে দিলাম।’

তুই এসব বাড়িতে নিয়ে যা। ধীরে ধীরে বেচে টাকা জমাবি। তোর মতো অসহায় গরিবদের সাহায্য করবি। অন্যের টাকার লোভ করবি না। কাউকে ঠকাবি না।

তুই সৎ মানুষ। এগুলো সৎ মানুষের পুরস্কার। রাখাল ছেলে সাত কলস হীরে-মুক্তো নিয়ে বাড়ি গেল। আম গাছের কথা মতো কাজ করল।

মাকে নিয়ে সুখে তার দিন কাটতে লাগল।