বিগ হিরো সিক্স

ছেলেটার নাম হিরো হামাড। বয়স ১৪। খুব দুরন্ত আর ভীষণ বুদ্ধিমান। চমৎকার তার রোবটিক্স জ্ঞান। হ্যাঁ সত্যিই বলছি ১৪ বছরের এই ছেলেটি একটি রোবটিক্স জিনিয়াস। তবে তার রোবটিক্সের বুদ্ধি ব্যয় হয় আজব সব গুণ্ডাপাণ্ডাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2017, 01:13 PM
Updated : 7 Feb 2017, 01:13 PM

হিরোর ভাই তাডাশিও রোবটিক্স নিয়ে লেখাপড়া করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়। ছোটভাই হিরোর কাজ তাকে মুগ্ধ করে আবার দুরন্তপনায় সে বেশ শঙ্কিতও। তাডাশি হিরোকে নিয়ে যায় ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে যেখানে তাডাশির সঙ্গে কাজ করে আরও চারজন রোবটিক্স জিনিয়াস, গোগো, ওয়াসাবি, হানিলেমন আর ফ্রেড। আজব আজব তাদের কাজ তবে এতসব আজব কাজের মধ্যে সবচেয়ে আজব আর জরুরী কাজটাই করে রেখেছে হিরোর ভাই তাডাশি। তাডাশির বানানো রোবটের নাম Baymax। এটি একটি স্বাস্থ্য কর্মী রোবট, যে মানুষের অসুখ নির্ণয় করতে পারে, সেটা নিরাময় করার চেষ্টা করতে পারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারে।

ভাইয়ের ল্যাবরেটরিতে এত কাজ দেখে হিরোর তো প্রাণ বের হয়ে যাচ্ছে এখানে কাজ করার জন্য। কিন্তু একটা ১৪ বছরের ছেলে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে কাজ করবে? হিরোর আগ্রহ দেখে তাডাশির শিক্ষক প্রফেসর ক্যালাহান হিরোকে একটি রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উৎসাহ দেন। শর্ত হলো, যদি হিরো সেটায় জয়ী হতে পারে তাহলে সরাসরি সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করার সুযোগ পাবে।

হিরোর তো মাথা গুলিয়ে যায়, এত্ত বড় সুযোগ! কী করলে কীভাবে এই ল্যাবরেটরির অংশ হওয়া যায় তা ভাবতে ভাবতে হিরোর নাওয়া খাওয়া শেষ। অবশেষে হিরো একটা বিশাল রোবট বানায়। উহু ভুল বললাম হিরো অবশেষে অনেকগুলো ছোট চুম্বককে রোবট বানিয়ে ফেলে। যারা সবাই মিলে একটা বিশাল রোবট হতে পারে। আসলে যে কোনো কিছু হতে পারে। যে কোনো কিছু, হিরো যা চায় তাই। এই রোবটদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে হিরোর ইচ্ছাশক্তি।

হিরোর প্রোজেক্ট সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় তো হিরোকে ভর্তি নিয়ে নেয়ই আবার একজন বিশাল ব্যবসায়ী ক্রেগও তাদের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে বসে। ক্রেগের প্রস্তাবে হিরো এবং তাডাশির বন্ধুদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলেও প্রফেসর ক্যালাহান খুব ক্ষেপে যান আর ক্রেগকে দূর করে দেন।

সব কিছু যখন স্বপ্নের মতো যাচ্ছিলো আর এত্ত বড় সাফল্য পাওয়ার পরে তাডাশি আর হিরো বাইরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিলো হঠাৎ রোবটিক্স প্রজেক্টের মেলায় আগুন লেগে যায়। সবাই জান বাঁচিয়ে বের হতে পারলেও প্রফেসর ক্যালাহান আগুনে আটকা পরেন, তাকে বাঁচাতে গিয়ে মারা যায় তাডাশিও। আর আমাদের বিগ হিরো সিক্সের গল্পটা শুরু হয় এখান থেকেই।

প্রিয় ভাইকে হারিয়ে হিরো খুব মুষড়ে পরে। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ইচ্ছে করে না, খেতে ইচ্ছে করে, কোনো কিছু করতেই ইচ্ছে করে না। তাডশির বন্ধুরা যতই হিরোকে চাঙ্গা করতে চেষ্টা করে কিছুতেই কিছু হয় না। এদিকে একদিন হিরো আবিষ্কার করে তাডাশি চলে গেলেও Baymax ওদের ঘরেই আছে একটা বাক্স বন্দি হয়ে। আর হিরোর বানানো সেই ছোট ছোট রোবটের একটা রোবটের ছিল হিরোর জামার পকেটেই। সে কোথায় যেন চলে যেতে চাচ্ছে।

হিরো আর Baymax ঐ ছোট রোবটের দেখানো পথে গিয়ে দেখতে পায় বিশাল ষড়যন্ত্র চলছে। মুখ মুখোশ আটা একলোক হিরোর সেই ইচ্ছাশক্তি দিয়ে যে কোনো কিছু করা সম্ভব রোবটদের একটা বাতিল কারখানায় হাজার হাজারটা তৈরি করছে। সেই লোক হিরোকে ধরার চেষ্টা করে কিন্তু Baymax আর হিরো কোনক্রমে জান বাঁচিয়ে ফিরে। সেই মুখোশ ধারী লোককে তাড়া করতে গিয়ে তাডশির অন্য বন্ধু গোগো, ওয়াসাবি, ফ্রেড আর হানিলেমন খুঁজে পায় হিরোকে। মুখোশ ধারী ওদের সবাইকে নাকানি-চুবানি খাওয়ায়। হিরো বুঝতে পারে নিজের তৈরি করা এই যা খুশি করতে পারা রোবট তার জীবনেই বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা থেকে মুক্তি পেতে হলে তাকেই কিছু করতে হবে। হিরো আর বন্ধুরা মিলে ঝাঁপিয়ে পরে যার যার রোবটিক্সের জ্ঞান আর মেধা নিয়ে। তাদের সঙ্গে যুত হয় Baymax। হিরো, গোগো, ওয়াসাবি, হানিলেমন, ফ্রেড আর Baymax কে নিয়ে যে দল গঠিত হয় তার নামই বিগ হিরো সিক্স।

অবশেষে নিজেদের প্রস্তুতি শেষ করার পরে Baymax-এর সহায়তায় সেই মুখোশ ধারীকে ওরা খুঁজে বের করে। তবে মুখোশ ধারীকে খুঁজে বের করার পরে তাদের জীবন তো সংশয় হয়ই। বিশ্বাসও ভেঙ্গে যায়। ওরা বুঝতে পারে তাডশির মৃত্যু কোনো নিছক দুর্ঘটনা না। এটা পরিকল্পিত। মুখোশ ধারী এই ভয়ংকর পরিকল্পনা কেন করেছে আর কেই বা এই মুখোশ ধারী এটা জানতে হলে তোমাদের দেখতে হবে বিগ হিরো সিক্স সিনেমাটি।

দেখতে দেখতে কখন যে মোটাসোটা ম্যাসমেলোর মতো দেখতে Baymax তোমাদের হাসাবে কাঁদাবে। হিরোর সঙ্গে তোমাদেরও কষ্ট হবে, রাগ হবে। হিরো তোমাদের এটাও শিখাবে, খারাপের জবাবে কখনও খারাপ কিছু করতে নেই। বরং ভালো কিছু করতে হবে যেন খারাপ কাজ করার শিকলটা চিরতরে ছিঁড়ে যায়।

বিগ হিরো সিক্স ডিজনির খুব বিখ্যাত একটি সিনেমা। এই সিনেমাটি ৮৭তম অ্যাকাডেমিক এওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ অ্যানিম্যাটেড মুভির খেতাব জয় করে নেয়।