বন্ধু পোকা লেডিবাগ

লেডিবাগ, লেডি বিটেল বা লেডিবার্ড পোকাটিকে তোমরা প্রায় সবাই চেনো। উজ্জ্বল রং লাল বা কমলা রঙের এই পোকার গায়ের কালো ফোটা ফোটা দাগ এটাকে ইতিমধ্যেই অনেক জনপ্রিয়তা দিয়েছে। তাই তোমার মোটামুটি সবার একটা লেডিবাগ খেলনা, স্টাফড টয় কমপক্ষে একটা স্টিকার তো অবশ্যই আছে।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2017, 07:34 AM
Updated : 13 Jan 2017, 07:34 AM

তারপরেও যারা চেনো না তাদের জন্য বলছি। লেডিবাগ লাল বা কমলা রঙের একটা পোকা। এদের শরীর একটা গোলাকৃতি গম্বুজের মতো হয়। আলাদা একটা ছোট্ট মাথা থাকে। ছোট ছোট ছয়টা পা থাকে আর গায়ে কালো কালো ফোটা ফোটা বা লম্বা লম্বা দাগ থাকে।

আমরা যে লেডিবাগকে দেখি তার মোটামুটি ৫ হাজার প্রজাতি পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে রয়েছে। এদের কারও গায়ে ডোরাকাটা দাগ কারও ছোপ ছোপ তবে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে উত্তর আমেরিকার ৭টা কালো ফোটা ওয়ালা লাল লেডিবাগের প্রজাতিটি।

কোনো কোনো দেশের মানুষ এই লেডিবাগকে রীতিমতো সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। আর করবে নাই বা কেন?লেডিবাগ হল কৃষকের বন্ধু পোকা। কীভাবে জানো? কিছু কিছু পোকা আছে যারা ফসল খেয়ে নষ্ট করে ফেলে। লেডিবাগ সেই সব পোকাকে খেয়ে ফসলকে রক্ষা করে। একটা লেডিবাগ তার জীবদ্দশায় ৫ হাজারের বেশি অপকারী পোকাকে খেতে পারে। তাহলেই বুঝো যে ক্ষেতে লেডিবাগ আছে সেই ক্ষেতে কৃষককে পোকার চিন্তা কত কম করতে হয়। 

লেডিবাগ দেখতে এত রঙিন কেন জানো? মোটেই সুন্দর দেখানোর জন্য নয় কিন্তু। লেডিবাগ তার উজ্জ্বল রঙ দিয়ে আসলে অন্য পোকাদের ভয় দেখায় আর বলে, “বাপু মানে মানে কেটে পরো, খাওয়ার জন্য আমি মোটেই সহজ কোনো পোকা নই।” তারপরেও যদি কোনো শিকারি লেডিবাগকে আক্রমণ করতে আসে অথবা লেডিবাগ নিজেও ভয় পায় জলদি করে পায়ের জোড়া থেকে তেলতেলে দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের করে। এতেও যদি কাজ না হয় তবে তারা মরে যাওয়ার ভান করে। বিপদ কেটে গেলে আবার ঠিকঠাক নিজের কাজে ফিরে যায়। 

লেডিবাগের প্রধান শত্রু হল, ফড়িং, মাকড়শা, ব্যাঙ, পাখি। এদের থেকে ছানাদের বাঁচাতে লেডিবাগ ডিম পারে পাতার নিচে। 

ডিম ফুটলে ছোট ছোট লার্ভা বের হয়। ডোরাকাটা কমলা বা লাল রঙের লার্ভাগুলোকে দেখতে ছোট ছোট অ্যালিগেটরের মতো দেখায়। লার্ভাগুলো খুব দ্রুত বড় হয় আর কয়েকবার খোলসও বদলায়। লার্ভাগুলো যখন পুরো বড় হয়ে যায় তখন তারা নিজেদের একটা পাতার নিচে তাদের লেজ আটকে ফেলে। এরপর গুটি বানিয়ে ঠিক প্রজাপতির মতো গুটির ভিতরে বাস করা শুরু করে।  এক দুই সপ্তাহ পরে গুটির ভিতর থেকে পূর্ণাঙ্গ লেডিবাগ বের হয়ে আসে।

লেডিবাগরা যে কোনো জায়গায় খুশি মনে থাকতে পারে। তাদের তুমি যেমন ঘাসের মধ্যে পাবে তেমনি নদীর পাড়েও পাবে, আবার গাছপালা ওয়ালা বাড়িতেও তাদের দেখতে পাওয়া অসম্ভব না।

লেডিবাগেরা একটু উষ্ণ আবহাওয়া পছন্দ করে। তাই যখন খুব শীত পরে বিশেষ করে শীত প্রধান দেশে যখন তাপমাত্রা অনেক নেমে যায় তখন এরা খুব কষ্ট পায় তাই উষ্ণ একটা জায়গা খুঁজে বের করে শীত নিদ্রা দিয়ে কোনোক্রমে শীতকালটাকে পার করার জন্য।

লেডি বাগ সম্পর্কে তো কত কথাই বলে ফেললাম। তবে খুব মজার একটা কথা বলা এখনও বাকি আছে। সেটা হল লেডিবাগের নামকরণ। এই পোকাটার নাম লেডিবাগ দিয়েছিলেন ইউরোপের এক কৃষক। কেন? একবার সেই কৃষকের সমস্ত ফসল পোকারা খেটে শেষ কর দিচ্ছিল। সেই কৃষক ছিলেন খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী। তিনি মাদার মেরির কাছে প্রার্থনা করলেন যেন তিনি ফসল রক্ষা করেন। এরপরই কোথা থেকে যেন লেডিবাগ এসে লোকটির জমিতে ভরে গেলো আর লেডি বাগ সব পোকা খেয়ে জমিকে ফসলে ভরিয়ে তুলল। তখন সেই কৃষক পোকাটির নাম দিলেন “বিটেল অফ আওয়ার লেডি” মানে আমাদের দেবীর পোকা। সেই থেকে বিবর্তিত হয়ে নামটা নানানভাবে আসলো। কেউ বলে লেডিবাগ, কেউ বলে লেডিবিটেল।

এদিকে নাসা তো কিছু লেডিবাগকে কিছু জাবপোকা সমেত স্পেসেও পাঠিয়ে দিয়েছে দেখার জন্য শূন্য অভিকর্ষজে জাব-পোকারা কীভাবে পালাতে পারে!