জনদুর্ভোগ: কল্যাণপুরে মধ্যরাতেও দীর্ঘ জট

মধ্যরাতেও দীর্ঘ যানজট; পাঁচ মিনিটের রাস্তা পেরোতে কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মতো রাতভর ব্যস্ত কোনো বাজার বা মহাখালী বাস টার্মিনালের মতো কোনো টার্মিনাল এটা নয়-মিরপুর রোডের কল্যাণপুর এলাকা।

হাসিবা আলী বর্ণাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2015, 10:46 AM
Updated : 29 June 2015, 10:46 AM

কল্যাণপুর ওভারব্রীজের দুই পাশ জুড়ে রয়েছে ২৫টিরও বেশি দূরপাল্লার বাসের টিকেট কাউন্টার।এসব কাউন্টারের কারণে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদের মত কল্যাণপুরও যেন হয়ে উঠেছে অঘোষিত বাস টার্মিনাল।

এতে ওই রুটে চলাচলকারীদের সপ্তাহের প্রতিটি দিনই পড়তে হয় যানজটের কবলে। কল্যাণপুর হয়েই অফিস-আদালত ও মার্কেটে আসতে হয় গাবতলী, মিরপুর-১ ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের।

হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস, টি আর ট্রাভেলস, সৌদিয়া, কুষ্টিয়া এক্সপ্রেস, ঈগল পরিবহন, নাহার এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ, কেয়া পরিবহন, ওয়েস্টার্ন ট্রাভেলস, মিন্টু এন্টারপ্রাইজ, সোনার তরী পরিবহন, জে আর পরিবহন, কেয়ারি পরিবহন, আল হামরা পরিবহন, ইকোনো সার্ভিস, একুশে এক্সপ্রেস, মামুন এন্টারপ্রাইজ, ফাতেমা স্পেশাল, আগমনী এক্সপ্রেস, ফাতেমা স্পেশাল, সেন্টমার্টিন সার্ভিস, ডিপজল এন্টারপ্রাইজসহ প্রায় ২৫টির বেশি দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার রয়েছে কল্যাণপুর বাস স্টপেজ এলাকায়।

টার্মিনাল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য সবসময়ই এসব কাউন্টারের সামনে থাকে একাধিক ছোট বাস। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বড় কোচগুলো কাউন্টারের সামনে সাধারণত না দাঁড়ালেও মিনিবাসগুলো এলোমেলো করে দাঁড় করিয়ে রাখায় রাস্তা দখল হয়ে থাকে দিনের সবসময়ই।

এমনকি অনেক সময় রাস্তার অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে রাখে বাসগুলো। পথ আটকে থাকায় অন্যান্য যানবাহনের দীর্ঘ জট লেগে থাকে সড়কে।

রাত ৯টা থেকে দূরপাল্লার বাসগুলো আসার পর যানজট এমন তীব্র হয়ে দাঁড়ায় যে আধ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতেই এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। মধ্যরাতেও এখানে চলাচলে যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।

হাসান আলী নামের মিরপুর-১ এর আনসার ক্যাম্পের এক বাসিন্দা বলেন, কাজকর্ম সেরে বাসায় ফিরতে প্রায়ই রাত ১২টা বেজে যায়।

“নিউ মার্কেট, শাহবাগ বা মহাখালী-যে দিক দিয়েই যাই না কেন কল্যাণপুর হয়েই গাড়িগুলো যায়। প্রায়ই রাতে কল্যাণপুরে যানজটে পড়তে হয়।”

কল্যাণপুরের বাসিন্দা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বিপ্লব রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই রাস্তা দিয়েই আমাকে যেতে হয়। জ্যামের কারণে শুধু কল্যাণপুর থেকে শ্যামলী যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ৪০ মিনিট বরাদ্দ রাখতে হয়, যেন অফিসটা ধরতে পারি সময় মত। তারপরও অধিকাংশ দিন প্রায় আধ ঘণ্টা দেরি হয়ে যায় অফিসে ঢুকতে। এখানকার বাস কাউন্টার অন্য কোথাও সরালে আমাদের এই কষ্টটা লাঘব হত।”

কল্যাণপুরের আরেক বাসিন্দা কর্মজীবী ফাতেমা আমিন বলেন, “রাস্তায় বের হয়েই ভোগান্তি। বড় বড় বাসগুলি দাঁড় করিয়ে রেখে রাস্তা ব্লক করে রাখে। এক জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। বাসের হর্ণ আর ধুলায় দিন দিন অসহনীয় অবস্থা হলেও এসব দেখার বা মনিটর করার কেউ নেই। ফলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের যন্ত্রণার সীমা নেই।”

এ বিষয়ে শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা মো. হিরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই কাউন্টার থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য বাস কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো থাকে। পুলিশও মাঝে মাঝে চাপ দেয়, কিন্তু আবার যাত্রীদেরও তো সুবিধা দিতে হয়।তাই সব দিকের তীর আমাদের দিকেই আসে।”

প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় কাউন্টার থেকে যাত্রী তোলা দুই দিন বন্ধ ছিল বলে জানান তিনি।

“প্রশাসনের চাপের কথা মালিককে জানানো হলে তিনি যাত্রী সুবিধার দিকেই নজর দেওয়ার কথা বলে ম্যানেজ করতে বলেন,” বলেন শ্যামলী পরিবহনের এই কর্মী।

কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল কামাল বলেন, কাউন্টারগুলোর সামনে মিনিবাস দাঁড় করানোর অনুমতি আছে কি না তা তার জানা নেই।

“তবে একসঙ্গে বেশি বাস দাঁড়ানো থাকলে আমরা সরিয়ে দিই, যাতে যানজট না হয়।”