‘ম্যানেজ’ করে ফুটপাতে ব্যবসা, ভোগান্তি সাধারণের

রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় থেকে নিউ মার্কেট হয়ে মিরপুর রোডের বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সায়েন্স ল্যাবরেটরি নামে পরিচিত) দিকে ফুটপাত ধরে হাঁটার আগে ভেবে দেখতে হবে কয়েকবার।

রাসেল জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2015, 08:05 AM
Updated : 13 Dec 2015, 08:17 AM

এখানকার রাস্তার দুই পাশে গড়ে ওঠা অসংখ্য বিপণী বিতান, ফুটপাতজুড়ে দোকানপাট আর গিজগিজ করা মানুষের ভিড় ঠেলে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পোহাতে হয় বিরাট ঝক্কির। ফুটপাত দখলে থাকায় পথচারীরা বাধ্য হন রাস্তায় নামতে। যত্রতত্র গাড়ি ও রিকশা ‘পার্কিং’ তো রয়েছেই।

নীলক্ষেত থেকে নিউমার্কেটে যাওয়ার ব্যস্ত রাস্তার একপাশের ফুটপাত পুরোটাই হকারদের দখলে।ভেতরের মার্কেটে বই, ফটোকপি, স্টেশনারির অসংখ্য দোকান। আশপাশে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় সারাদিনই শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগে থাকে।

রাস্তার আরেক পাশে বিছানা-বালিশের দোকানের মালামালও ফুটপাতে ঠাঁই পেয়েছে।

নিউ মার্কেট-পিলখানা রোডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের’ ছাত্রী তানজিনা তানিন এই পরিস্থিতির সিটি করপোরেশন এবং জনপ্রতিনিধিদের দায়ী করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন নীলক্ষেতের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। যানজটের কারণে দ্বিগুণ রিকশাভাড়া দিয়েও বেশিরভাগ সময় সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারি না। হাঁটারও উপায় নেই। বছরের পর বছর ধরে এগুলো চলছে। এসব দেখভালের জন্য যে কেউ আছে, তা মনেই হয় না।”

এলাকার ভয়াবহ যানজটের কথা স্বীকার করেছেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এ কে এম মাহবুবুর রহমানও।

তিনি বলেন, “রাস্তাগুলো দেখভালের জন্য আমাদের একটি স্পেশাল টিম কাজ করে। কিন্তু সদস্য কম থাকায় সবসময় নজরদারি করা হয়ে ওঠে না।”

যানজট কমাতে হকার উচ্ছেদের উপর জোর দেন তিনি।

নিউ মার্কেটের সামনে থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি ফুটওভার ব্রিজ পর্যন্ত রিকশার আলাদা লেন থাকলেও এর অর্ধেকটাই চলে গেছে হকারদের দখলে। ঢাকা কলেজের সামনের রিকশা লেনেরও একই অবস্থা।টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের সামনের ফুটপাতে থরে থরে সাজানো কাঠের চৌকি, পড়ার টেবিল ও চেয়ার।

বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফুটপাতে কাঠের আসবাব বিক্রি করছেন আজাদ মিয়া। তিনি জানান, দাম কম হওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ফুটপাত থেকেই এসব আসবাব কেনেন।

“চলাফেরায় কিছুটা অসুবিধা হলেও দাম কম থাকায় শিক্ষার্থীরা আমাদের কিছু বলে না।”

হকাররা বলছেন, থানা-পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করেই ব্যবসা চালাচ্ছেন তারা।

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে ভ্রাম্যমাণ হকার হালিম জানান, নীলক্ষেত থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত তার মতো পাঁচ শতাধিক হকার আছে।

“অনেকবছর ধরেই আমরা ফুটপাত আর রাস্তায় ব্যবসা করি। কেউ বাধা দেয় না। মাঝে মাঝে পুলিশ ঝামেলা করে, তখন টাকা-পয়সা দিয়ে মিটমাট করে ফেলা হয়।”

ভ্রাম্যমাণ হকারদের প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় বলে জানান হালিম।

ফুটপাতে দোকান বসানোর জন্যও ‘চাঁদা দেওয়া’র কথা জানালেন নীলক্ষেত ফুটপাতের বই বিক্রেতা জাহাঙ্গীর।

“অধিকাংশ দোকানই চাঁদা দেয়। জায়গা বণ্টনের জন্য আলাদা লাইনম্যানও আছে। দৈনিক ৮০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়, পুলিশসহ অন্যরা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়।”

কিছু বইয়ের দোকান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জায়গা ইজারা নিয়েছে জানালেও ‘কার কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে’ তা বলতে পারেননি জাহাঙ্গীর।

তবে হকারদের কাছ থেকে ‘তোলা’ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন নিউ মার্কেট থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত।

তিনি বলেন, “হকারদের নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন সময়ে থানা থেকে সতর্ক করা হয়। তবে চাঁদাবাজির ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না।”

ফুটপাত থেকে হকারদের কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে না জানতে চাইলে ওসি বলেন, “সিটি করপোরেশন থেকে অনেক সময় এসব ফুটপাত হকারদের কাছে ইজারা দেওয়া হয়। আমাদের কাছে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য না থাকায় হঠাৎ করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না।”

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মাদ বিলাল বলছেন, তারা কখনই ফুটপাত ইজারা দেন না।

“পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এজন্য সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে কমিটি করা হয়েছে। তারা হকারদের ছবিসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে।”