মান্না দে। ভুবনজয়ী এক গানের পাখি। জন্মের পরে পিতৃপ্রদত্ত নাম প্রবোধচন্দ্র দে হলেও গানের ভুবনে মান্না দে নামেই বিপুল জনপ্রিয়তা পান। এপার বাংলা ওপার বাংলা জুড়েই তাঁর জনপ্রিয়তা পঞ্চাশের দশক হতে আজও সমান অম্লান।
Published : 15 Jun 2013, 02:52 PM
কিংবদন্তি মান্না দে এ পর্যন্ত তিন সহস্রাধিক গানে কণ্ঠের জাদু ছড়িয়েছেন। ১৯৫৮-তে তারই সুরারোপিত গানের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরুর পর এখন অব্দি একইরকম তারুণ্যময় রয়েছেন তিনি। লক্ষ ভক্তের মনে মান্না দে যুগযুগ ধরেই জনপ্রিয়তায় অনন্য থাকবেন। যে শিল্পী নিজেই নিজের গানের সুরারোপ করেন--
"এইকূলে আমি আর ওইকূলে তুমি
মাঝখানে নদী এক বয়ে চলে যায়" (গীতিকার - বঙ্কিম ঘোষ ১৯৫৮)
অতঃপর কেবলই বহমানতায় অনন্য মান্না দে। গানেগানে পথ চলায় কত যে জনমননন্দিত গান গেয়ে চলেছেন তালিকা তার সুদীর্ঘ। বহু অসাধারণ চলচ্চিত্রে তাঁর অনেক গান একালেও ঘরে বাইরে বাজে যখন-তখন রেকর্ডে। তেমনই একটি গান--
"এমন বন্ধু আর কে আছে বলো তোমার মতো মিস্টার"
(দীপ জ্বেলে যাই ১৯৫৯)
কিছু গান তো তাঁকে সর্বকালের জনপ্রিয়তা দিয়েছে। যেমন এই গানটি--
"কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই"
আজকের তরুণ-তরুণীরাও বাজায় বারংবার এ গান। এমনকি নতুন প্রজন্মের নবীন গায়কের কণ্ঠেও রেকর্ডকৃত হয়েছে এই গানটি। অর্থাৎ কতটা আবেদনময় হলই এমনটা সম্ভব সে তো বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের বাংলাদেশে পল্লি অঞ্চলে আর মফস্বলের যে কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানে বাজতে থাকে মান্না দে গীত বিখ্যাত গানগুলো--
"ললিতা গো, ওকে আজ চলে যেতে বল না
ও ললিতা..." /
"কফোঁটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি ভালোবাসবে"/
"রঙ্গিনী কত মোর মন দিতে চায়"/
"ও কেন এত সুন্দরী হল"
এ গানগুলি বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও বহুকাল ধরেই বাজবে সন্দেহ নেই। কেননা কথা ও সুরের যাদু অত্যন্ত সহজিয়া, হৃদয়ছোঁয়া।
এই ১লা মে ২০১৩-তে মান্না দে-র ৯৪তম জন্মদিন পালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের "বিশেষ সঙ্গীত মহাসন্মান" সেদিনই শিল্পীকে দেIয়া হয়েছে। এ যাবত সংগীতে অবদানের জন্য মান্না দে পেয়েছেন ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী, দাদাসাহেব ফালকে ও পদ্মবিভূষণ সমেত আরও অনেক সন্মাননা। ১৯৮৮-তে বাংলাদেশের রেনেঁসা সাংস্কৃতিক পরিষদ মান্না দে-কে "মাইকেল সাহিত্য পুরষ্কার প্রদান করে। ২০০৫-এ মান্না দে-র "জীবনের জলসাঘরে" নামের আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে আনন্দ পাবলিকেশন কর্তৃক। পরে ইংরেজী, হিন্দী, মারাঠী ভাষাতেও গ্রন্থটি অনুদিত হয়েছে। ২০০৮-এ এটি একটি তথ্যচিত্র হিসেবে মুক্তি পেয়েছে। একজন শিল্পীর জীবদ্দশায় এত যে প্রাপ্তি সে তাঁর কৃতিত্বেরই পরিচায়ক।
মান্না দে গুরুতর অসুস্থ্ হয়ে হাসপাতালের নিবিড় তত্ত্বাবধানে। আমরা মান্না দে-র মতো অনন্য সংগীতজ্ঞের সম্পূর্ণ আরোগ্য প্রার্থনা করি। মান্না দে তাঁর সংগীত শিল্পী স্ত্রীকে সবচে' বেশি ভালোবাসেন বলে জানিয়েছেন একান্ত সাক্ষাতকারে। স্ত্রীর স্মৃতির প্রতি সন্মান জানাতে একটি নতুন এ্যালবামের কাজ হাতে নিয়েছিলেন, কিন্তু কাজটি অসমাপ্ত রয়েছে। সুস্থ্ হয়েই তিনি যেন তা সম্পন্ন করেন এই প্রার্থনা আজ। আদতে মান্না দে-র মতো শিল্পীদের তিন-চারশো বছরের আয়ুষ্কালই পাওয়া উচিত।
মান্না দে-র একটি গান বিষম প্রিয় আমার -
"যদি কাগজে লেখ নাম
কাগজ ছিঁড়ে যাবে
পাথরে লেখ নাম
পাথর ক্ষয়ে যাবে
হৃদয়ে লেখ নাম
সে নাম রয়ে যাবে"।।
তাঁরই গানের মাধ্যমে হৃদয় দিয়ে জানাই তাঁর প্রণতি।