ক্রিকেটপাগল বলিউড 

ভারতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিং ধোনির ওপর নির্মিত হতে যাচ্ছে সিনেমা।

সেঁজুতি শোণিমা নদীজেনিফার ডি প্যারিস ও ,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2014, 11:57 AM
Updated : 29 Sept 2014, 11:57 AM

এর আগে বলিউডে কোনো ক্রিকেটারের জীবনীনির্ভর সিনেমা নির্মিত নাহলেও ক্রিকেট বার বার এসেছে সিনেমার বিষয়বস্তু হয়ে। ভারতীয়দের ক্রিকেট নিয়ে পাগলামির কথা মাথায় রেখে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সিনেমা। তার মধ্যে ১০টি সিনেমার কথা তুলে ধরা হচ্ছে।

লাগান (২০০১)

২০০১  সালে মুক্তি পায় আমির খান অভিনীত আশুতোষ গোয়ারিকারের সিনেমা লাগান।ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনাধীন ভারতে একদল কৃষকের ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার কাহিনী ‘লাগান’। সিনেমাটি ভারতজুড়ে যেমন সমাদৃত হয়েছে, প্রশংসিত হয়েছে ভারতের বাইরেও। এমনকি অস্কার আসরে বিদেশি ভাষারসিনেমা বিভাগে মনোনয়নও পায় সিনেমাটি। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ (১৯৫৭) এবং ‘সালাম বোম্বে’(১৯৮৮)র পর ‘লাগান’ ছিল তৃতীয় হিন্দি সিনেমা যা এই সম্মান অর্জনকরে।

বক্স-অফিসেও বাজিমাত করেছিল ‘লাগান’। বছরের সবচাইতে ব্যবসাসফল সিনেমার খাতায় নাম লিখিয়েছিল এটি।

ইকবাল (২০০৫)

অজপাড়া গাঁয়ের মূক ও বধির এক কিশোর যার স্বপ্ন একটাই, ভারতের জাতীয় দলের হয়ে খেলা। ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটির নাম ‘ইকবাল’যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন শ্রেয়াশ তালপাড়ে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন শোয়েতা বাসু প্রসাদ।

‘ইকবাল’-এর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ভিপুল কে রাওয়াল এবং পরিচালনা করেছিলেন নাগেশ কুকুনুর।  স্বল্প বাজেটের সিনেমাটি বক্স-অফিসে দারুণ ব্যবসা করে।সমালোচকদের কাছেও ব্যপক প্রশংসিত হয় সিনেমাটি।

আওয়াল নাম্বার (১৯৯০)

ক্রিকেট নিয়ে তৈরি হিন্দি সিনে জগতের প্রথম দিকের সিনেমাগুলোর এটি একটি। সিনেমাটি পরিচালনার পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দেব আনন্দ। আর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন আমির খান ও আদিত্য পাঞ্চোলি।

সিনেমায় দেব আনন্দের চরিত্র একজন সাবেক ক্রিকেটারের যিনি আবার ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকও। একই সঙ্গে ডাকসাইটে এক পুলিশ অফিসারও তিনি। ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলে নিজের ভাই আদিত্য পাঞ্চোলিকে বাদ দিয়ে আমির খানকে নেন তিনি। এতেই প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠেন আদিত্য, ছক কষেন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে জিততে হলে ওভারের শেষ বলে ছক্কা পেটাতে হবে আমির খানকে। ওদিকে স্টেডিয়ামের ওপরে হামলার জন্য প্রস্তুত আদিত্য আর তাকে থামাতে আরেক হেলিকাপ্টার থেকে বন্দুক তাক করে আছেন দেব আনন্দ। এমনই শ্বাসরুদ্ধকর ক্লাইম্যাক্স নিয়ে তৈরি ‘আওয়াল নাম্বার’ সিনেমাটি সেলুলয়েডের বিনোদনের পাশাপাশি মাঠের উত্তেজনার স্বাদও দেয়।

ফেরারি কি সাওয়ারি (২০১২)

‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর মতো ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দেওয়া প্রযোজক ভিধু ভিনোদ চোপড়ার এই সিনেমাটি বলে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা প্রতিভাবান শিশু কায়ো, তার স্নেহশীল বাবা রুসি আর সাবেক ক্রিকেটার দাদা দেবুর গল্প। 

নবাগত রাজেশ মাপুসকারের পরিচালনায় সিনেমাটিতে দেখা যায় লর্ডসে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়া কায়োর জন্য দেড় কোটি রুপি জোগাড় করতে শচিন টেন্ডুলকারের ফেরারি গাড়িটি চুরি করে রুসি। এরপর ঘটতে থাকে নানা ধরনের ঘটনা।

সিনেমায় শারমান জোশি, বোমান ইরানির অনবদ্য অভিনয় মন কেড়েছে সমালোচকদের। আর বিদ্যা বালানের আইটেম গানও প্রশংসা কুড়িয়েছিল সবার।

কায় পো চে (২০১৩)

সুশান্ত সিং রাজপুত, রাজকুমার রাও আর অমিত সাধ অভিনীত ‘কায় পো চে’ সিনেমাটি কেবল ক্রিকেট নিয়ে উদ্যমী তিন তরুণের গল্পই বলে না, একই সঙ্গে দর্শকদের নিয়ে যায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ক্ষত-বিক্ষত গুজরাতের অলি-গলিতে।

সিনেমার গল্প তিন বন্ধু ইশান, গোভিন্দ আর ওমিকে নিয়ে; যারা নিজেদের এলাকায় একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি আর খেলার সরঞ্জাম বিক্রির দোকান খোলার উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যেই ২০০১ সালে গুজরাতের ভয়াবহ ভূমিকম্পে তাদের স্বপ্ন ধুলোয় মিলিয়ে যায়। উগ্রপন্থী ধর্মান্ধ রাজনীতির ছায়ায় তিন বন্ধুর সম্পর্কেও ফাটল ধরে। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হওয়া দাঙ্গায় মুসলমান কিশোর আলিকে বাঁচাতে গিয়ে ওমির গুলিতে প্রাণ হারায় ইশান। দশ বছর পরে সেই আলিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে খেলে। ইশানের শিখিয়ে দেওয়া শটেই প্রথম বলে ছক্কা পেটায় সে।

এই সিনেমার মাধ্যমেই ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে সুশান্ত সিং রাজপুতের। ইশানের চরিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় দৃষ্টি কাড়ে সমালোচকদের। স্বল্প বাজেটের সিনেমাটি বক্স-অফিসেও ব্যাবসা করে দারুণ। চেতন ভাগাতের উপন্যাস ‘দ্য থ্রি মিসটেইকস অফ মাই লাইফ’ অবলম্বনে তৈরী সিনেমাটির পরিচালনা করেছিলেন অভিষেক কাপুর।

পাটিয়ালা হাউস (২০১১)

অক্ষয় কুমার ও আনুশকা শর্মা অভিনীত ‘পাটিয়ালা হাউস’ সিনেমাটি পারিবারিক নাটকীয়তায় ভরপুর হলেও কাহিনীকে এগিয়ে নিয়েছে ক্রিকেট।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক পাঞ্জাবী পরিবারের গল্প বলে ‘পাটিয়ালা হাউস’। পরিবারের বড় ছেলে অক্ষয় সুযোগ পায় ব্রিটিশ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার। কিন্তু বাবারজাত্যাভিমান ও দেশপ্রেমের কারণে স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয় তাকে। এ সিনেমায় দীর্ঘদিন পর আবার একসঙ্গে কাজ করেন ঋষি কাপুর-ডিম্পল কাপাডিয়া জুটি। বক্স-অফিসে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি সিনেমাটি।

দিল বোলে হাড়িপ্পা! (২০০৯)

ইয়াশ রাজ ফিল্মসের ব্যানারে মুক্তি পাওয়া ‘দিল বোলে হাড়িপ্পা!’তে প্রথমবারের মত জুটি বেঁধেছিলেন রানি মুখার্জি এবং শাহিদ কাপুর। এর কাহিনী গড়ে উঠেক্রিকেটপাগল এক তরুণীকে নিয়ে, যে ক্রিকেট খেলার জন্য পুরুষ সাজে।

রোমান্টিক-কমেডি ধাঁচের সিনেমাটি পরিচালনা করেন আনুরাগ সিং। কিন্তু সিনেমাটি বক্স-অফিসে সফলতা পায়নি।

হ্যাট্রিক (২০০৭)

বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা ‘হ্যাট্রিক’-এ জুটি বাঁধেন রিমি সেন এবং কুনাল কাপুর। আরও অভিনয় করেন নানা পাটেকর, ড্যানি দেঞ্জংপা এবং পরেশ রাওয়াল। ধোনিভক্ত স্ত্রী আর তার বিব্রত স্বামীর গল্প বলে সিনেমাটি।

মিলান লুথারিয়ার পরিচালনায় কমেডি ধাঁচের সিনেমাটি বক্স-অফিসে ব্যর্থ হয়।

‘স্টাম্পড’ (২০০৩)

গৌরব পান্ডের পরিচালনায় ‘স্টাম্পড’ প্রযোজনা করেন অভিনেত্রী রাভিনা ট্যান্ডন। এর মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে অভিষেক হয় তার।

কমেডি-ড্রামা ধাঁচের এই সিনেমাতে অভিনয়ও করেছিলেন রাভিনা, তবে সিনেমাটি চলেনি।

‘ভিক্টরি’ (২০০৯)

‘লাভ স্টোরি টুয়েন্টি ফিফটি’র ব্যর্থতার পর এটি ছিল অভিনেতা হারমান বাওয়েজার বলিউডে টিকে থাকার দ্বিতীয় চেষ্টা। ক্রিকেট নিয়ে গড়ে ওঠা কাহিনীর এই সিনেমাটির শুটিং হয় অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতে। এই সিনেমাটি নাকি সে সময়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমাগুলোর একটি ছিল। কিন্তু বক্স-অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে সিনেমাটি।