Published : 29 Nov 2013, 05:23 PM
দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হল চারদিনব্যাপী বার্ষিক বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় আর্মি স্টেডিয়ামে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ৬০ শিল্পী অভিনয় ও নাট্যকৌশলের মাধ্যমে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিক অভিযাত্রা তুলে ধরেন।
‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৩’ অনুষ্ঠান শুরু হয় বিশাল কৃষ্ণার কত্থক নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। বিশাল কৃষ্ণার সঙ্গে সেতারে সংগত করেন জয়ন্ত ব্যানার্জী, তবলায় কুশল কৃষ্ণা এবং সহশিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন দেবাশিস সরকার। বিশাল কৃষ্ণার পরিবেশনা শেষে তার হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পী মিনু হক।
উৎসব উদ্বোধন করেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, স্কয়ার গ্রæপের পরিচালক ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী এবং আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমির নির্বাহী পরিচালক রবি মাথুর।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “শাস্ত্রীয়সংগীতই সকল সংগীতের ভিত্তি।”
প্রথমদিনসহ পুরো উৎসব বিশিষ্ট চিন্তাবিদ জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে (১৯১২-৯৯) উৎসর্গ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং অধ্যাপক রাজ্জাকের ভ্রাতৃবধূ সমাজসেবক মমতাজ খালেক।
উদ্বোধনীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চে ওঠেন বিদুষী গিরিজা দেবী। প্রথমে তিনি রাগ যোগকোষে বিলম্বিত পরিবেশন করেন। পরে ঠুমরি সম্রাজ্ঞীখ্যাত এই শিল্পী পরিবেশন করেন একটি ঠুমরি ও দাদরা। বিদুষী গিরিজা দেবীর বয়স আশি বছর ছাড়িয়েছে। কিন্তু তার কণ্ঠ ও রসবোধে কোনো কমতি পড়েনি। তিনি একই সঙ্গে কথা ও সুরে এক ঘণ্টা মোহিত করে রাখেন শ্রোতাদের।
গিরিজা দেবীর সঙ্গে তবলায় সংগত করেন সঞ্জয় অধিকারী, হারমোনিয়ামে রূপশ্রী ব্যানার্জী, সারেঙ্গিতে সারওয়ার হুসাইন এবং সহশিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন অপরাজিতা লাহিড়ী। পরিবেশনা শেষে তার হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশের রবীন্দ্রংগীত শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান।
এরপর শুরু হয় বাংলাদেশের তবলাবাদক স্বরূপ হোসেন, ইফতেখার আলম প্রধান, গৌতম সরকার ও মোহাম্মদ জাকির হোসেনের পরিবেশনা। ২৮ মিনিটে চার শিল্পী তাদের তবলা নৈপুণ্য প্রদর্শন করে শ্রোতাদের বিমোহিত করেন। পরিবেশনা শেষে চার শিল্পীকে উৎসবের স্মারক প্রদান করেন বাংলাদেশে ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার সন্দীপ চ্যাটার্জী।
এরপর মঞ্চে ওঠেন সেতারশিল্পী অয়ন সেনগুপ্ত। তিনি রাগ মারু বেহাগ পরিবেশনা শুরু করেন, যার আলাপ ছিল প্রায় আধ ঘণ্টার। এরপর বাজান ধুন, মিশ্র খাম্বাজ।
অয়ন সেনগুপ্তের সঙ্গে তবলায় সংগত করেন অশোক মুখার্জী। পরিবেশনা শেষে তাকে উৎসব স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক।
এরপর মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী। মঞ্চে ওঠার পর কৌশিকী প্রথমে পরিবেশন করেন রাগ আভোগী। বেশ দীর্ঘ একটি আলাপ শেষে বন্দিশ শুরু করেন তিনি। পরে তিনি একটি তিলঙ ঠুমরি পরিবেশন করেন, যা বড়ে গুলাম আলী খাঁ সাহেবের বন্দিশের সঙ্গে তার বাবা অজয় চক্রবর্তীর গাওয়া একটি বন্দিশের মিশ্রণ করে গেয়েছেন।
বিদুষী কৌশিকীর সঙ্গে তবলায় সংগত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি, হারমোনিয়ামে রূপশ্রী ভট্টাচার্য এবং সারেঙ্গিতে আল্লারাখা কলাবান্ত। পরিবেশনা শেষে বিদুষী কৌশিকীকে উৎসব স্মারক তুলে দেন স্কয়ারের অঞ্জন চৌধুরী।
সরোদ শিল্পী পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার এরপর মঞ্চে আসেন। তিনি প্রথমে রাগ কৌশিকী-কানাড়া পরিবেশন করেন। এরপর পরিবেশন করেন রাগ চন্দ্রনন্দন। পণ্ডিত তেজেন্দ্রর সঙ্গে তবলায় সংগত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি। পরিবেশনা শেষে তাকে উৎসব স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা।
প্রথম দিনের শেষ শিল্পী হিসেবে মঞ্চে ওঠেন কণ্ঠশিল্পী ও পণ্ডিত ভাতৃদ্বয় রাজন মিশ্র এবং সাজন মিশ্র। প্রথমে তারা শোনান রাগ ভাটিয়ারি। এরপর একটি গুজরাটি ঠুমরি। সবশেষে রাগ ভৈরবী।
পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অপি করিম, হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল এবং কৌশিক শংকর দাস।
প্রথমদিন বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠান শেষ হয় ভোর ৫টায়। শুক্রবার অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকাল সাড়ে ৫টায়। চলবে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত। উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার উৎসর্গ করা হয়েছে অগ্রগণ্য শিক্ষক ও ঢাকায় সংগীত মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পণ্ডিত বারীন মজুমদারকে। সন্ধ্যা থেকে যথাক্রমে মঞ্চে উঠবেন বিদুষী আলারমেল ভাল্লি, সাকেত সাহু, বিদুষী বোম্বে জয়শ্রী, অসিত দে, পণ্ডিত পূর্বায়ণ চ্যাটার্জি, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও ওস্তাদ রাইস খান।