রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অনিয়মের জন্য কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।
Published : 09 Jul 2015, 08:12 PM
ব্যবসায়ীরা জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট বাবদ যে অর্থ সংগ্রহ করেন তা স্বচ্ছতা ও ‘ঈমানদারির’ সঙ্গে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার এনবিআর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নজিবুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) সংগ্রহ করে, তা জমা দিচ্ছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমি চাইব সকলে ভ্যাট সংগ্রহ করে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ঈমানদারির সঙ্গে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে।”
অনেক ব্যবসায়ী ঠিকমত ভ্যাট পরিশোধ না করে কর্মকর্তাদের হয়রানি করে ও হুমকি দিয়ে থাকেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অসৎ ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
‘জাতীয় মূসক দিবস-২০১৫ ও মূসক সপ্তাহ’র প্রস্তুতি জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
গত বছর ধরে ১০ জুলাই জাতীয় মূসক দিবস পালন করে এনবিআর। আর ১০ জুলাই পরবর্তী এক সপ্তাহ মূসক সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়। ২০১১ সাল থেকে এই দিবস পালন করে আসছে এনবিআর।
এবারের মূসক দিবসের স্লোগান হচ্ছে- ‘সময়মত মূসক দেব, দেশগড়ায় অংশ নেব।’
সংবাদ সম্মেলনে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) ব্যবস্থা প্রচলন করা চ্যালেঞ্জিং মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “ইসিআর ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইসিআরকে অকার্যকর করে ফেলেছে। এজন্য ভ্যাট ইন্টেলিজেন্স অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছে।
“এসব কারণে যারা ভ্যাট দেবেন বা যারা ভ্যাট নেবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- কোনো অনিয়মকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমি আমার সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাব তারা যেন নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিবারের মতো এবারও মূসক দিবস উপলক্ষে ঢাকায় মতবিনিময় সভা, শোভাযাত্রা করা হবে।
এছাড়া বিভিন্ন দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ, টেলিভিশনে টকশো, তথ্যচিত্র সম্প্রচার, মোবাইল ফোনে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি পোস্টার, স্টিকার ও ব্যানার করা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও যশোর কমিশনারেট কার্যালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হবে।
এবছর মূসক দিবসে সর্বোচ্চ মূসক প্রদানককারীকে সম্মাননা দেওয়া হবে। জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন, ব্যবসা ও সেবা খাতে তিনজন করে মোট নয়জন এই সম্মাননা পাবেন। আর জেলা পর্যায়ে এই সম্মাননা পাবেন ১১০ জন।
এবার জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন খাতে সর্বোচ্চ মূসক প্রদানকারীর সম্মাননা পাচ্ছে তিতাস গ্যাস ফিল্ড (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড, সিলেট ও মেসার্স রশিদপুর কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন প্লান্ট।
সেবা খাতে এই সম্মাননা পাবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (জোয়ারসাহারা), চৌধুরী টি ওয়্যারহাউজ, চট্টগ্রাম ও ন্যাশনাল টেলিভিশন লিমিটেড (আরটিভি)।
আর ব্যবসা খাতে সর্বোচ্চ মূসক প্রদানকারীর সম্মাননা পাচ্ছে গ্যালারি এপেক্স, মাল্টিলিংক কমপ্লেক্স (গাজিপুর), আড়ং (লালমাটিয়া) ও মোস্তফা মার্ট (বসুন্ধরা সিটি)।
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ভ্যাট থেকে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।
বিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভ্যাট থেকে ৪৮ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা মোট রাজস্ব আয়ের ৩৬ শতাংশ।