‘১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ১ কোটি কর্মসংস্থান’

আগামী ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2015, 03:22 PM
Updated : 4 June 2015, 04:22 PM

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এই ঘোষণা দেন।

মুহিত বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন, রপ্তানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করতে সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

“জমির অভাবে অনেক বড় ধরনের বিনিয়োগ উদ্যোগ যা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মহাচীন ও ভারত থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলো বাস্তবরূপ পায় না। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সাধনের জন্য ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”

প্রথম পর্যায়ে অনুমোদিত সিরাজগঞ্জ, মংলা, মিরসরাই, আনোয়ারা ও শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরও ২৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের পথে।

চীন ও জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল সংরক্ষিত রেখেছে সরকার। ভারতের জন্যও অর্থনৈতিক অঞ্চল সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনাধীন বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

সরকারি উদ্যোগের সব অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় ভূমি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যোগাযোগ অবকাঠামো জোগানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

“আমি দেশবাসীকে জানাতে চাই, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর ফলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় ১ কোটি মানুষের।”

বড় সেতু নির্মাণ-পুনর্নির্মাণ

বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার জন্য ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ৬১টি সেতু পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

দ্বিতীয় কাচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণের কাজ চলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে ভবিষ্যতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এছাড়া গলাচিপা, পায়রা ও কচা নদীর উপর সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সড়ক অবকাঠামোর ক্ষেত্রে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করার কাজে অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন তিনি।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে মধ্যে ছয়টি প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।

এগুলো হচ্ছে, ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহামড়ক এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ, কক্সবাজার-টেকনাফ-মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ ২য় পর্যায় (ইনানী থেকে সিলখালী), যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণ, আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ৭ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ।

বড় পরিকল্পনা রেলওয়েতেও

রেল খাতের উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদী একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এতে ২৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম, কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া, পাঁচুরিয়-ফরিদপুর-ভাঙ্গা, ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালারচর এবং খুলনা-মংলা নতুন রেললাইন নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ, মেহেরপুর জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে রেল সার্ভিস চালু করা।

এছাড়াও রয়েছে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তরে রেলসেতু নির্মাণ, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেল লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ।

মুহিত বলেন, “আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে আখাউড়া-আগরতলা রেল কানেকটিভিটি স্থাপন করতে যাচ্ছি আমরা।”

বিআরটিসির ৪০০ বাস

অর্থমন্ত্রী বলেন, সড়কপথে যাত্রী সেবার মানোন্নয়নের জন্য বিআরটিসির অধীনে ৩০০টি দ্বিতল এবং ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস সংগ্রহ করা হচ্ছে।

গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ‘ড্রাইভিং ইনস্ট্রাক্টর’ তৈরি এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দিতে ৫টি মোটরযান পরিদর্শন কেন্দ্র প্রতিস্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।