পুঁজিবাজারে শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দাবি

পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়া ক্রমহ্রাসমান কর অবকাশ সুবিধা পাঁচ বছরের জন্য শতভাগ করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2015, 03:22 PM
Updated : 5 May 2015, 01:10 PM

সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের করহার হ্রাসেরও দাবি জানিয়েছেন আর্থিক খাতের ব্যবসায়ীরা।

এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান সভাপতিত্বে সভায় অংশ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও পুঁজিবাজার চাঙ্গা করার উপযোগী উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

আলোচনায় অংশ নেন স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা খাত, মার্চেন্ট ব্যাংক, অর্থ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া বলেন, “দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বাজারকে আরও গতিশীল করার জন্য আমরা রাজস্ব বোর্ডের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাচ্ছি।

“ডিমিউচুয়ালাইজেশন পরবর্তী পুঁজিবাজারকে পাঁচ বছরমেয়াদি ক্রমহ্রাসমান হারে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারের স্বার্থে প্রস্তাব করছি, উক্ত কর অবকাশ পাঁচ বছরের প্রতিটির জন্য ১০০ শতাংশ হারে প্রদান করার।”

গত বছরের ২৪ জুন এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে পুঁজিবাজারের জন্য পাঁচ বছরের ক্রমহ্রাসমান হারে কর অবকাশ সুবিধা ঘোষণা করে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারের আয় প্রথম বছরে ১০০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরে ৮০ শতাংশ, তৃতীয় বছরে ৬০ শতাংশ, চতুর্থ বছরে ৪০ শতাংশ ও পঞ্চম বছরে ২০ শতাংশ হারে কর অব্যাহতি পাবে।

ছিদ্দিকুর বলেন, “পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে পুরো পাঁচ বছরই শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া দরকার।”

এছাড়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কর্তৃক উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল, সব কোম্পানির ক্ষেত্রে একইভাবে করহার কমানো, ২০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আয়কর রেয়াত বহাল রাখা এবং করমুক্ত লাভের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেন তিনি।

সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মসচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, “পুঁজিবাজারে বর্তমানে খুবই দুরবস্থা যাচ্ছে। আসন্ন বাজেটে বাজার চাঙ্গা করার জন্য যতদুর সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার বলে মনে করি।”

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে করপোরেট কর কমানোর দাবি জানান বিএমবিএর সহ-সভাপতি আক্তার এইচ সান্নামাত।

তিনি বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নীট আয়ের ওপর ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে আয়কর দেয়। অথচ একই ধরনের প্রতিষ্ঠান ব্রোকারেজ হাউজ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো ১৫ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে।

অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মতো মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর করপোরেট করহার কমিয়ে ১৫ শতাংশ আরোপের দাবি জানান তিনি।

পলিসি বোনাসের উপর আরোপিত ৫ শতাংশ হারে ‘গেইন ট্যাক্স’ তুলে নেওয়ার দাবি জানান বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু।

তিনি বলেন, “ছোট ছোট পলিসি হোল্ডাররা ১০/১৫/২০ বছর যাবৎ সঞ্চয় করে সামান্য বোনাস পায়। এই বোনাসের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। বীমাগ্রহণে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করতে গেইন ট্যাক্স নেওয়া বন্ধ করা দরকার।”

ফাইল ছবি

এছাড়া বীমার সুদের উপর আরোপিত ৫ শতাংশ কর ও এজেন্টদের আয়ের উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গত দুবছর ধরে বাজারে মিউচুয়াল ফান্ড আসছে না। এর অন্যতম কারণ কোনো ফান্ড বাজারে আসতে গেলে মোট ফান্ডের ২ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে।”

পুঁজিবাজার চাঙ্গা করার স্বার্থে ২ শতাংশ হারে কর প্রত্যাহার করে আগের তহবিলপ্রতি ৩৩ টাকা ৭৫ পয়সা হারে কর আরোপের দাবি জানান ইফতেখারুজ্জামান।

একইসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনে পাঁচ বছর বিক্রি না করলে তা থেকে অর্জিত মুনাফা করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
আলোচনায় আরো অংশ নেন সাবেক সচিব ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক ওলিউল ইসলাম ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আব্দুল হক।

বক্তাদের প্রস্তাবনার বিষয়ে আলোচনা না করে শেষে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমি শুধু আপনাদেরকে ট্যাক্সের সংজ্ঞাটা বলবো। ট্যাক্স ইজ দ্য কস্ট উই পে ফর দ্য সিভিলাইজেশন।”