তেলের সাশ্রয়েই হবে পদ্মা: ফরাসউদ্দিন

জ্বালানি তেলের দাম না কমানোর পরামর্শ দিয়ে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, এ থেকে সাশ্রয় হওয়া অর্থ দিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচ হয়ে যাবে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2015, 04:20 PM
Updated : 28 March 2015, 04:58 PM

শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে। আমদানি ব্যয় কমেছে। বাড়ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ।

“বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, যে পদ্মা সেতুর খরচ নিয়ে আমাদের যতো চিন্তা ছিল; সেই সেতু নির্মাণের জন্য যে অর্থ খরচ হবে তা জ্বালানি তেল আমদানির সাশ্রয়ের অর্থ দিয়েই হয়ে যাবে।”

ফরাসউদ্দিন বলেন, “বিশ্বে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকোতে অতিকায় বৃহদাকার তেলের মওজুদ এবং এর উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আহরণ ও বিপণনের প্রক্রিয়ায় দশ বৎসর আগের তুলনায় তেলের দাম এখন এক তৃতীয়াংশ। এ প্রবণতা অব্যাহত না থাকলেও তেলের মূল্য আবার বেড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই।

“ফলে বাংলাদেশে বর্তমান প্রেক্ষিতে আগের তুলনায় বছরে অন্ততঃ ৩০০ কোটি ডলার (৩ বিলিয়ন ডলার; প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে ২৪ হাজার কোটি টাকা) সাশ্রয় হবে পিওএল আমদানি খরচে। যা দিয়ে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচের পুরোটাই হয়ে যাবে।”

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ এম  বদরুদ্দোজা জ্বালানি তেল আমদানি খরচ নিয়ে বলেছেন, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানি খাতে মোট ৩৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। বিশ্ববাজারে দাম কমায় এবার (২০১৪-১৫ অর্থবছর) তা ১৬ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে।

বিপিসি চেয়ারম্যানের দেওয়া এ হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জ্বলানি তেল আমদানি খাতে সরকারের ২২ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হবে।

এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা আছে ২৯০ কোটি ডলার (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে ২৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে অনেক টানাপোড়েনের পর নিজস্ব অর্থে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যে এই সেতুর ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম না কমানোর পরামর্শ দিয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, “আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের বেশির ভাগ অংশ ব্যবহার করে ধনী লোকেরা। সে কারণে আমি সরকারকে অনুরোধ করবো তেলের দাম কমানোর প্রয়োজন নেই।”

বরং দাম না কমিয়ে এই খাত থেকে যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা অবকাঠামোর পাশাপাশি শিল্প খাতে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাবেক গভর্নর বলেন, “প্রতি বছর এই খাত থেকে অর্থ সাশ্রয় হবে তা দিয়ে আরো বেশি মুলধনী যন্ত্রপাতি এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করে শিল্প সম্প্রসারণে শক্তি যোগ করা যাবে।”

বিষয়টি আরও বিশ্লেষণ করে করে ফরাসউদ্দিন বলেন, “উৎপাদনের দুই বড় উপাদান শ্রম ও মূলধনী যন্ত্রপাতি পুজি প্রতিনিয়ত একে অন্যের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে বা হয়ে থাকে। তীব্র জনসংখ্যার স্বল্পতার সংকটে পড়া উন্নত বিশ্বে শ্রমকে যন্ত্রপাতি মূলধনী পুঁজি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হত। কিন্তু বর্তমানে সে সম্ভাবনা নিঃশেষ হয়ে গেছে।”

‘তাই সমষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে তাদের শ্রমসেবা আমদানি করা ছাড়া গত্যন্তর নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশসমূহ বিগত দিনের অভিবাসন আইনের কড়াকড়ি উঠিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। খুলে যাচ্ছে শ্রম সেবা রপ্তানির বাজার।

“এতে বিশেষ করে উপকৃত হবে বাংলাদেশ। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড আহরণে সক্ষম ১৫ থেকে ৩৫ বছরে অবস্থানকারী পাঁচ কোটি মানুষকে বৃত্তিমূলকসহ প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদে রূপান্তর করে ওই সব দেশে পাঠাতে হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় পর এই সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশি কেনাকাটার বিল বাবদ ৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।”

বিপিসি চেয়ারম্যান  বদরুদ্দোজা বলেন, চলতি অর্থবছরে ৫৫ লাখ মেট্ট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ১৩ লাখ টন ক্রুড ওয়েল (অপরিশোধিত)। বাকি ৪২ লাখ টন পরিশোধিত।

তিনি বলেন, প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত (রিফাইন) ১৪৮ ডলার থেকে ৬৬ ডলারে নেমে এসেছে। অপরিশোধিত তেলের দাম নেমে এসেছে ৫০ ডলারের নিচে।

জানুয়ারি থেকে জ্বালানি তেলে বিক্রি করে বিপিসি লাভ করছে বলে জানান বদরুদ্দোজা।