রেলের উন্নয়নে ৬৫০৪ কোটি টাকা

রেল খাতের উন্নয়নে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2014, 06:58 PM
Updated : 23 Dec 2014, 06:59 PM

ছয় হাজার ৫০৪ কোটি টাকা টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত পাশাপাশি দুটো ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে একটি হবে সম্পূর্ণ নতুন।

এই ব্যয়ের পাঁচ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা হিসেবে দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি)। বাকিটা সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেবে।

২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পসহ দশ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার মোট আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের কার‌্যপত্রে বলা হয়েছে, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার দূরত্বে পাশাপাশি যে দুটো ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে তার মোট দৈর্ঘ্য ১৪৪ কিলোমিটার।

এছাড়া লুপ ও সাইডিংস লাইনের জন্য আরো ৪০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন তৈরি করা হবে। সব মিলে ১৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ করা হবে।

সভা শেষে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে খুব শিগগিরই ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের একটি প্রধান করিডোরে পরিণত হবে। তখন বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে মালামাল পরিবহণ সুবিধা দিতে পারবে।

“এতে করে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা আকৃষ্ট হবেন। বিনিয়োগ বাড়বে।”

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, টঙ্গী-ভৈরববাজার এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনের ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালে শেষ হবে। এর সঙ্গে আখাউড়া-লাকসাম সেকশন ডাবল ডুয়েলগেজ হয়ে গেলে পুরো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ডাবল ডুয়েলগেজ হয়ে যাবে।

“ফলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহণের চাহিদা মেটানো সহজ হয়ে যাবে।”

অনুমোদিত আট প্রকল্পের মধ্যে ৬টি নতুন এবং ২টি সংশোধিত।

‘প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ৫ এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি’ নামের অপর একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। বিদ্যুৎ খাতের এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা পাওযার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ৫টি এলাকায় প্রি-পেমেন্ট মিটারিং চালু করা হবে।

এর ফলে খিলগাঁও, তেজগাঁও, কাজলা, কামরাঙ্গীরচর ও স্বামীবাগ এলাকার বাসিন্দারা কারেন্সি ট্রান্সফার সিস্টেমের (সিটিএস) মাধ্যমে স্মার্ট কার্ডভিত্তিক সিঙ্গেল অথবা থ্রি ফেইজের প্রি-পেমেন্ট মিটার কিনে প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি মোবাইল কার্ডের মতো টাকা দিয়ে অগ্রিম বিদ্যুৎ মিটার কিনে নিজের প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।

‘প্রকল্পটিকে অত্যন্ত ইতিবাচক’ আখ্যা দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন,  “এর ফলে বিদুত্যের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সরকারের রাজস্ব আদায়েও কোন বকেয়া থাকবে না। সেইসাথে লোডশেডিংও কমবে।”

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২২৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এছাড়া কম্পিউটার শিক্ষার প্রসার এবং ইন্টারনেট সংযোগ বাড়িয়ে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং পেশাকে দেশব্যাপী আরো সম্প্রসারণ করতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

এ প্রকল্পের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষাকে ভালভাবে ছড়িয়ে দিতে দেশের ২০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০০০টি কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা হবে। প্রতিটি ল্যাবে কমপক্ষে সতেরটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, একটি এলইডি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, একটি হেডফোন ও একটি করে থ্রিজি পকেট রাউটার থাকবে।

এছাড়া দেশব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সি ছড়িয়ে দিতে ৬৪টি জেলা থেকে একটি করে উপজেলায় একটি করে ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন করা হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এর কাজ শেষ করবে।

বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার কারখানাসহ শিল্প কারখানায় দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করতে অপর একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮১ কোটি টাকা।

এ প্রকল্পের আওতায় আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকে রূপান্তরিত করে তা শিল্পকারখানায় সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রূপান্তরের জন্য মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দরে এলএনজি টার্মিনাল তৈরির কাজ চলছে।

অন্যদিকে বিবিয়ানা ও জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের অতিরিক্ত ৬৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সার, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় সরবরাহের জন্য এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সভায় গুরুত্বপূর্ণ ৯টি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৪র্থ পর্যায়) এবং স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প (১ম সংশোধিত) নামের তিনটি প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়।