আর্থিক ‘অনিয়মের’ শীর্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়

অর্থসহ সরকারের ১০টি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রায় ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ধরা পরেছে সরকারি নিরীক্ষায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2014, 06:59 PM
Updated : 24 Nov 2014, 07:32 PM

২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে পরবর্তী চার অর্থবছরের হিসাব বিবরণীর ওপর নিরীক্ষা চালিয়ে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দপ্তর।

২৭৪টি আপত্তির অধীনে মোট ৬ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে সিএজির অডিট অধিদপ্তরগুলো, যার শীর্ষে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অনিয়ম ধরা পড়া এসব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ, নৌপরিবহণ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, রেলপথ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং পররাষ্ট্র বিভাগও রয়েছে।

সোমবার রাজধানীর কাকরাইলের অডিট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব অনিয়ম নিয়ে তৈরি ১৭টি প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেন মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ।

মোট আর্থিক অনিয়মের প্রায় অর্ধেক ঘটেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগে, যা মোট সাতটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

শুধু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১১৯টি আপত্তির বিপরীতে তিন হাজার ৫৩ কোটি ৩১ লাখ টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে।  অনিয়মগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফ সংক্রান্ত অনিয়মই বেশি।

এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কনসোর্টিয়ামভুক্ত ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা আদায় না করা, ফোর্স পিএডি সৃষ্টিতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ এবং সহায়ক জামানত সংগ্রহ না করেই ঋণপত্র খুলতে দেওয়াসহ নানা ধরনের অনিয়মের কথা সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকনিয়ন্ত্রিত ২২টি ব্যাংকের ৩৮টি শাখা থেকে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে নয় কোটি ৭৯ লাখ টাকার অনিয়ম পেয়েছে সিএজি।

আর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে তোলা ৪৪টি আপত্তির বিপরীতে ৬৮ কোটি ১২ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে।

অনিয়মের পরিমাণের দিক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরেই রয়েছে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান।

এই মন্ত্রণালয়ের ডাক, তার ও দূরালাপনী অধিদপ্তর নিয়ে দুটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মোট ৩৮টি আপত্তির বিপরীতে দুই হাজার ৬৭৬ কোটি ৬০ লাখা টাকার অনিয়ম পেয়েছে সিএজি।

অনিয়ম ও চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করার পরেও ওয়ারিদ টেলিকমের নিবন্ধনে ব্যাংক গ্যারান্টি বাজেয়াপ্ত না করা, শেয়ার হস্তান্তরের সময় কম ফি নেওয়া, স্পেকট্রাম চার্জ আদায়ে বিভিন্ন টেলিফোন কোম্পানিকে ছাড় দেওয়া, তরঙ্গ ও বেতার যন্ত্রে লেভি (চার্জ) আদায় না করা, এয়ারটাইম চার্জের বকেয়া ফি আদায় না করা এবং অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় না করাসহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়ম রয়েছে।

এরপর অনিয়মের শীর্ষে রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলওয়ের জমি ব্যবস্থাপনা ও নিবন্ধন ফি আদায় সংক্রান্ত নিরীক্ষায় ১৩টি আপত্তি তোলা হয়েছে, যার সঙ্গে ১৫৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার অনিয়ম পেয়েছে সিএজি।

স্থানীয় সরকারের ২০০৯-১০ অর্থবছরের হিসাব সম্পর্কিত নীরিক্ষা প্রতিবেদনে ২০টি আপত্তি তুলেছে সিএজি। এসব আপত্তির বিপরীতে জড়িত আর্থিক অনিয়মের পরিমাণ ১৪৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

এই বিভাগে অনিয়মের মধ্যে রয়েছে, ভুয়া দরপত্র প্রকাশ দেখিয়ে জালিয়াতি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের হস্তান্তরিত পাকা রাস্তার ওপর মাটির তৈরি কাঁচা রাস্তা উন্নয়নের নামে অর্থ পরিশোধ ও ডিপিপিবহির্ভূত রাস্তা মেরামতে ব্যয়সহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়ম।

বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২০০৯-১০ অর্থবছরের হিসাবে তোলা ১৬টি আপত্তির বিপরীতে ৮৮ কোটি টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের হিসাবে ২০টি আপত্তির বিপরীতে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার অনিয়ম পেয়েছে সিএজি।

এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে শেল্টারহাউজ ব্যবহার সংক্রান্ত পাওনা আদায় না করা, অতিরিক্ত বিমান ভাড়া পরিশোধ করা এবং সরকারি তহবিল থেকে অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ পরিশোধ।

সংবাদ সম্মেলনে সিএজি মাসুদ আহমেদ বলেন, “এগুলোই আর্থিক খাতের পূর্ণ চিত্র নয়, নমুণা মাত্র।  তবে সকলের সচেতনতা বাড়লে এবং অডিট এ্যাক্ট পাশ হলে এই অনিয়ম কমবে।”

এসব অর্থকে ‘আদায়যোগ্য’ ও ‘সমন্বয়যোগ্য’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “অনিয়মের সঙ্গে জড়িত অর্থ আদায় হচ্ছে। এ অর্থ আদায়ের পদ্ধতি আছে। কেননা যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের পেনশন তহবিল বা গ্রাচ্যুইটি থেকে অর্থ কর্তন করে রাখা যায়।”

২০১৩-১৪ অর্থবছরের অডিটে ধরা পড়া অনিয়মের সাত হাজার ৮৮০ কোটি ৪২ লাখ টাকা আদায় হয়েছে বলে তিনি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষক শ্যামল কান্তি চৌধুরী ও মো. আবুল কাশেমসহ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।