অপরিকল্পিত নগরায়নে স্বপ্ন ‘ভেস্তে’ যাওয়ার শঙ্কা

বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলেও তার সুফল ভোগে অপরিকল্পিত নগরায়ন অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে বলে রাজধানীতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে মত প্রকাশ করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2014, 05:32 PM
Updated : 17 Nov 2014, 05:32 PM

২০১৪ সালের দক্ষিণ এশিয়ায় মানব উন্নয়ন নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের ওই অনুষ্ঠানে সোমবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “গরিব থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন আমরা দেখছি।

“কিন্তু আমরা যদি সামগ্রিক অবস্থার কথা বিবেচনা করি, তাহলে দেখব কিছু নিম্নমানের সূচকে ভর করে সেই পথে এগুচ্ছি। একটি নিম্নমানের সূচক হচ্ছে অপরিকল্পিত শহর, অন্যটি হচ্ছে মর্যাদাহীন নাগরিক জীবন এবং আরেকটি হচ্ছে অ-বাসযোগ্য শহর। কাজেই বাংলাদেশের নিম্ন মানের মধ্যম আয়ের গন্তব্যে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।”

“তবে এটি আমাদের কাম্য নয়,” ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) আয়োজনে লাহোরভিত্তিক মাহবুবুল হক সেন্টার থেকে ‘আরবানাইজেশন: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটি’ শিরোনামের ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

হোসেন জিল্লুর বলেন, “ঢাকার অপরিকল্পিত, অনিয়মে ভরা আর অপরিষ্কার নগরায়ন দেশের অন্যান্য শহরেও অনুসরণ করা হচ্ছে। আমরা নগরায়ন করছি কিন্তু বিনিময়ে হারাচ্ছি মানুষের মর্যাদা।

“নগরায়ন গরিব মানুষের জন্য সুযোগ তৈরি করছে। দরিদ্র মানুষেরা বেশি আয়ের আশায় নগরে ছুটে আসছে। কিন্তু এই আয় উন্নতমানের জীবন দিবে কি না, আমরা সে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।”

শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী গ্রামীণ গরিবদের থেকে বেশি আয় করলেও বিভিন্ন সামাজিক সূচকে তাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে বলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর।  

‘নগর বাংলাদেশই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ’ উল্লেখ করে অপরিকল্পিত নগরায়ন থেকে উত্তরণে দাতা সংস্থাগুলোর পরিবর্তে সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন ও উদ্যোগের ওপর জোর দেন তিনি।

সাবেক এই উপদেষ্টা বড় বড় শহরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞের অঞ্চলগুলো ঘিরে বেশ কিছু শহর গড়ে তোলার পরামর্শও দেন।

অনুষ্ঠানে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির নানা দিক তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ইশরাত ইসলাম বলেন, গ্রাম থেকে শহর অভিমুখী জনস্রোতের কারণে নগরায়ন উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে। কিন্তু এই প্রবণতাকে সেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি।

এছাড়া শহরে আসা এই জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের দিকে  ঝুঁকে পড়ার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে নগরায়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টি একরকম অবহেলিত রয়ে গেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নগরায়নের সমস্যা ও সম্ভাবনা সেভাবে প্রতিবেদনে উঠে আসেনি বলে মন্তব্য করেন বুয়েটের এই শিক্ষক।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত গতির নগরায়ন মূলত অপরিকল্পিত ও অসমান। বড় বড় শহরগুলোতেই কেবল মানুষ ভিড় করছে। নগরায়ন হচ্ছে প্রধানত প্রাকৃতিক নিয়মে শহুরে জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আর গ্রাম থেকে শহরে আসা জনস্রোতের জন্য।

এই দ্রুত নগরায়ন যে পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, পর্যাপ্ত আবাসন, যাতায়াত , শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে, তাও প্রতিবেদনে উঠে আসে।

সামান্য কিছু শহুরে জনগোষ্ঠীর জন্য সম্পদ তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আরো অনেক কিছুই করা ‘নগর শাসনের চ্যালেঞ্জ’ বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

ক্ষমতা আর সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ, নাগরিক অবকাঠামো নির্মাণ ও পৌর সেবায় রাজস্ব অর্থ ব্যয়, নগরের বৃদ্ধি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা এবং শহুরে গরিব মানুষের জন্য নাগরিক পরিবেশ উন্নত করতে কাজ করার বিষয়ে প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এটিএম নুরুল আমিন এবং বিআইজিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান হাফিজ রহমানও উপস্থিত ছিলেন।