বিদ্যুৎ পাবে দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩ লাখ পরিবার

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিন লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে ৮৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2014, 03:05 PM
Updated : 28 Oct 2014, 03:05 PM

‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ নামের এ প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার ৪১ উপজেলায় এক হাজার ৮৫৮ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হবে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) এই প্রকল্পসহ এক হাজার ৫৩৫ কোটি টাকার পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

২০২১ সালের মধ্যে সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

যে সব জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা।

প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৭৮৮ কোটি টাকা দেবে সরকার। বাকি ৪৪ কোটি টাকা ওজোপাডিকোর নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে।

অনুমোদিত প্রকল্পের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, এক হাজার ৮১ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ ছাড়াও এ প্রকল্পের আওতায় ৭৭৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন মেরামত, তিনটি নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ, ১১টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পুনর্বাসন ইত্যাদি কাজ করা হবে।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির চাকা যত ঘুরবে বিদ্যুতের চাহিদা ততই বাড়বে; স্বাভাবিক।”

বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আনার ফলে অতিরিক্ত ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। সরকার অবশ্যই এ বর্ধিত চাহিদা পূরণ করবে।”

এর আগেও একনেকের সভায় দেশের কয়েকটি অঞ্চলে নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের জন্য কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

কার্যপত্রে বলা হয়েছে, এই ২১ জেলার ৪১ উপজেলায় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে হলে প্রায় ১২ হাজার ৭৯০ কিলোমিটার বিতরণ লাইনের প্রয়োজন হবে। এখন পর্যন্ত নয় হাজার ৯৭০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া রাজশাহী বিসিক শিল্প নগরীতে শিল্প প্লটের চাহিদা মেটাতে সভায় ‘রাজশাহী বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর আওতায় রাজশাহীর পবায় ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ২০০টি শিল্প প্লট ইউনিট নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে ৫৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

সভায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে দুটি জেলখানা নির্মাণের জন্য একটি সংশোধিত প্রকল্পেরও অনুমোদন দেয়া হয়।

অনুমোদিত ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে বিচারাধীন আসামিদের জন্য কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের (সংশোধিত) আওতায় একটি পুরুষ ও একটি মহিলা কারাগার নির্মাণ করা হবে।

এতে চার হাজার পুরুষ এবং দুইশ নারী আসামির স্থান সংকুলান হবে। এছাড়া ২০ শয্যার একটি হাসপাতালও নির্মাণ করা হবে।

কারা অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তর যৌথভাবে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। দ্বিতীয় দফা প্রকল্পটি সংশোধন করা হল।

২০০৬ সালে প্রথম যখন এর অনুমোদন দেয়া হয় তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩১৭ কোটি। আট বছর পর এর ব্যয় ৬৯ শতাংশ বেড়ে ৪০৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধিকতর উন্নয়ন লক্ষে ১১০ কোটি টাকার অপর একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে সভায়। প্রকল্পের আওতায় ১২ তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী এবং একটি ছাত্র হল নির্মাণ করা হবে।

এছাড়া ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ অংশে নদী তীর সংরক্ষণ নামের ১৩৪ কোটি টাকার একটি সংশোধিত প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়েছে মঙ্গলবারের একনেক সভায়।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সভায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।