‘কলমানিতে’ লেনদেন বেড়েছে

ব্যাংকগুলোর হাতে অলস তারল্য থাকার পরও দুটো বড় ধর্মীয় উৎসব সামনে রেখে আন্তঃব্যাংক ঋণ(কলমানি) লেনদেন ও সুদ হার সামান্য বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2014, 03:09 PM
Updated : 1 Oct 2014, 03:09 PM

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বুধবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৮ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা।

এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড লিজিং ও ইউনাইটেড ক্যাপিটাল সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে একটি ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে। আর কলমানিতে এদিন সর্বনিম্ন সুদ হার ছিল ৬ শতাংশ।

সব মিলিয়ে গড় সুদ হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।

মঙ্গলবারও কলমানিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। তার আগের দিন ছিল সাত হাজার ৯০২ কোটি টাকা।

একটি ব্যাংক কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যে সুদ হারে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ নেয় তাকে বলা হয় কলমানি রেট। সাধারণত ঈদের আগে টাকা তোলার হার বেড়ে যায় বলে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকায় টান পড়ে। তখন কল মানি রেটও বেড়ে যায়। 

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এক বছরের বেশি সময় ধরে দৈনিক আন্তঃব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। আর কলমানি সুদ হার গড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে ছিল। গত রোজার ঈদেও কলমানি বাজার ছিল স্থিতিশীল।

বাজারে টাকার চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দিয়েছে। এর আগের দিন ব্যাংকগুলো ছয় হাজার ৪৬১ কোটি টাকা নিয়েছে।

গত সাত কর্মদিবসে কলমানিতে লেনদেন হয়েছে ৫৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ২৬ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা অলস পড়ে ছিল, যার মধ্যে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর হাতে ছিল ১১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা।

আর ইসলামী ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা ১৫ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা কোনো ধরনের বিনিয়োগে নেই। 

টাকা তোলার হিড়িক থাকলেও কলমানি রেট স্বাভাবিক

বাজারে তারল্য থাকলেও কলমানি লেনদেন ও সুদহার বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকগুলোতে অলস তারল্য থাকলেও ক্যাশ ইন হ্যান্ড বা রেডি টু ইনভেস্ট করার মতো ক্যাশ কম। কারণ ব্যাংকগুলো অনেক টাকা বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। এ কারণেই কলমানিতে লেনদেন বেড়েছে।”

তবে এ পরিস্থিতি একেবারেই সাময়িক বলে মনে করেন ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক এই চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “এটা বিশেষ কিছু না। সম্প্রতি নগদ টাকার চাহিদা বেশি। বাট ইটজ ভেরি টেম্পোরারি। কাল পর্যন্ত একটু টানটান থাকবে।”

দুর্গাপূজা ও কোরবানির ঈদের আগে বৃহস্পতিবারই শেষ কর্মদিবস বলে নগদ টাকার চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এদিন কলমানি বাজারে সুদহার আরো খানিকটা বাড়তে পারে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।

তারা বলছেন, অলস তারল্য থাকলেও সেই টাকা রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংকের কাছে। রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাতেই অলস তারল্য বেশি। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা অর্থ কোনো না কোনোভাবে বিনিয়োগ করেছে। অধিকাংশ বিনিয়োগ হয়েছে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে।

এরই মধ্যে কোরবানির ঈদ ও পূজার সময় অন্য সময়ের তুলনায় নগদ টাকার চাহিদা বেশি থাকে বলে কলমানিতে লেনদেন ও সুদ হার বেড়েছে বলে ব্যাংকাররা মনে করছেন।

বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক শাখাগুলোতে অতিরিক্ত ভীড় দেখা যায়। নগদ অর্থ তুলতে অনেক গ্রাহক সকাল সকাল ব্যাংক শাখায় হাজির হন।

ফলে সারাদিনই নগদ টাকার চাহিদা বেশি ছিল বলে ব্যাংক ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছেন।