অর্থবছর শুরু বড় উদ্বৃত্তে

বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে শুরু হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছর।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2014, 03:27 PM
Updated : 26 Sept 2014, 04:26 PM

প্রথম মাস জুলাইয়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ১০২ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এ অঙ্ক ছিল ৫৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

আমদানির চেয়ে রপ্তানি আয় বেশি আসায় এবং রোজার ঈদে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠানোয় এই উদ্বৃত্ত হয়েছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

জুলাই মাসে আমদানি ব্যয়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেশি আসায় পণ্য বাণিজ্যে কোন ঘাটতিও ছিল না। উল্টো ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। বাংলাদেশে এর আগে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

গত বছরের জুলাই মাসে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল।

অবশ্য অর্থনীতির গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান আমদানির চেয়ে রপ্তানি আয় বেশি আসা এবং প্রবাসীদের রেমিটেন্স নির্ভর উদ্বৃত্ততে আশার কিছু দেখছেন।

সোমবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এক মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে পরিষ্কার করে কিছু বলা যাবে না। তারপরও বলা যায়, আমদানি কমার কারণেই এটা হয়েছে। আমার জানা মতে, এর আগে কোন মাসেই আমদানি ব্যয়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেশি আসেনি।”

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এই নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, “তবে আমাদের দেশের বাস্তবতায় এটা ভালো নয়। যে করেই হোক আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর এ জন্য আমদানি অবশ্যই বাড়তে হবে। বিশেষ করে ক্যাপিটাল মেশিনারি এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।”

“অর্থনীতির অনেক সূচকই ইতিবাচক। কিন্তু বিনিয়োগটা স্থবির হয়েই আছে। এটা বাড়াতে শিল্প বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় আমদানি বাড়াতেই হবে।”

অর্থনীতির আরেক গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, “সাধারণত প্রতি মাসেই রপ্তানির চেয়ে আমদানি খাতে বেশি ব্যয় হয়। কিন্তু গত জুলাই মাসেই তার ব্যতিক্রম হয়েছে। যে কোন কারণেই হোক না কেন জুলাই মাসে পণ্য আমদানি খাতে ব্যয় কম হওয়ায় এমনটা হয়েছে।”

এ ধরনের ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসাবে অভিহিত করেন জায়েদ বখত।

তিনি বলেন, “মূলত এই রেমিটেন্সই ব্যালান্স অব পেমেন্টে বড় উদ্বৃত্ত রাখতে অবদান রেখেছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার লেনদেন ভারসাম্যের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) বাংলাদেশ ২৯৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করেছে।

অন্যদিকে একই মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) বাংলাদেশ ২৭৭ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত দাড়িয়েছে ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থ্যাৎ জুলাই মাসে বাংলাদেশে কোন বাণিজ্য ঘাটতি ছিল না।

গত বছরের জুলাই মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১২ কোটি ৯০স লাখ ডলার।

তথ্য‌ পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয় দুটোই কমেছে। রপ্তানি আয় কমেছে সামান্য; ১ শতাংশ। আর আমদানি ব্যয় কমেছে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ২৯৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করেছিল। আর আমদানি খাতে ব্যয় করেছিল ৩১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৭০০ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনও ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ১৫৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল আরও বেশি ২৩৮ কোটি ৮০ লাখ (২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার।

তার আগের ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। অর্থ্যাৎ ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ করে ঘাটতি পূরণ করতে হয়েছিল। ২০১০-১১ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

অবশ্য পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি না থেকে উদ্বৃত্ত থাকলেও সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।

গত অর্থবছরের জুলাই মাসে এ খাতের ঘাটতি ছিল ৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত জুলাই মাসে তা বেড়ে ৩৪ কোটি ২০ লাখ ডলার হয়েছে।

মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন।

এ মাসে ১৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। গত বছরের জুলাই মাসে এসেছিল ১১০ কোটি ডলার।

চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। গত বছরের জুলাইয়ে যার পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এই সময়ে পুঁজিবাজারে (পোর্টফোলিও বিনিয়োগ) ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। গত বছরের জুলাই মাসে যার পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার।