ব্যাংকে রাজনৈতিক নিয়োগ ব্যর্থ হয়েছে: মুহিত

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পরিচালনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়োগের সাফাই এক সময়ে গাইলেও সে অবস্থান থেকে সরে এলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2014, 02:41 PM
Updated : 18 Sept 2014, 04:15 PM

সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের হাতেই পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষপাতি তিনি।

সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই জনতা ব্যাংকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক ব্যাংকার সিরাজ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরীকে (এস এ চৌধুরী) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান মুহিত।

তিনি বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছি, ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক দলের লোকদের নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যর্থ হয়েছে।

“আর এ জন্যই এখন থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের নিয়োগ দেওয়া হবে।”

গত জুলাই মাসে বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংকে ব্যাংকার আলাউদ্দিন এ মজিদকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দেন তিনি।

গত সরকারের সময় সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালীসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা উঠলে তার পক্ষে তখন যুক্তি দেখিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।

এরপর বিভিন্ন ব্যাংকে আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশিত হয়।  প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির বোঝা মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু।

বেসিক ব্যাংকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া বাচ্চুর নানা ‘অনিয়ম’ নিয়ে বেশ কিছুদিন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

তদন্ত করে সে সব অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছিল। সে সুপারিশের পর বাচ্চু পদত্যাগ করেছিলেন, পরে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়।

সোনালী ব্যাংকে বহুল আলোচিত হল-মার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গেও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারিশে সেই পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।

‘অভিজ্ঞ ব্যাংকার দরকার’

অধ্যাপক আবুল বারকাতের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেলেন এস এ চৌধুরী, যিনি এক সময় সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

সোনালী ব্যাংকে দায়িত্ব পালনের সময় এস এ চৌধুরীকে নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গটি তুলে ধরা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন।

“সোনালীর এমডি থাকার সময় তিনি একজন উদ্যোক্তার ভাড়া করা হেলিকপ্টারে করে তার প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি তার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়েছিলেন।”

“আমাদের পরিচালনা পর্ষদে এখন ভালো-অভিজ্ঞ ব্যাংকার দরকার। এস এ চৌধুরী ভালো ব্যাংকার। সে কারণেই তাকে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে,” সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন মুহিত।

এস এ চৌধুরীর পূর্বসূরি আবুল বারকাতের সঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলে। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে যান মুহিত।

বারকাত টানা পাঁচ বছর জনতা ব্যাংকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর গত ৮ সেপ্টেম্বর বিদায় নেন।

নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে জনতা ব্যাংকের সিএসআর (সামাজিক দায়বদ্ধতা) কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পর অর্থমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন বারকাত। তিনি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও অসততার অভিযোগও আনেন।

অন্যদিকে মুহিত বলেন, বারকাতকে চেয়ারম্যান হিসেবে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়নি বলেই তার সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন তিনি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বুধবার এস এ চৌধুরীকে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে তার মেয়াদ কত দিনের তা উল্লেখ করা হয়নি।  

এস এ চৌধুরী সোনালী ছাড়াও জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (বিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

বেসিক ব্যাংকে দায়িত্ব পাওয়া আলাউদ্দিন এ মজিদ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।