বিদেশি ঋণে ঝুঁকির আশঙ্কা

বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ আর্থিক ব্যবস্থায় ঝুঁকি তৈরি করছে বলে বিষেজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2014, 08:05 PM
Updated : 14 August 2014, 08:05 PM

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতির উপর বৃহস্পতিবার  বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক আলোচনায়  তারা এ মত দেন।

বেসরকারি খাতে বিদেশ থেকে যে ঋণ নেয়া হচ্ছে, তা বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে বলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

তাদের মতে, দেশের ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অতিরিক্ত তারল্য থাকায় বিদেশি ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্ক হতে হবে ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “হঠাৎ করে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। পরবর্তীতে এটি রিজার্ভকে চাপে ফেলতে পারে। মুদ্রানীতিতে মুল্যস্ফীতির ওপর যতটা জোর দেয়া হচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের ওপর ততটা দেয়া হচ্ছে না। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখে পড়ছে।”

বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের সুদ হার নির্ধারণ করা হয় লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট (লাইবর) এর সঙ্গে আরো কয়েক শতাংশ যোগ করে। এখন লাইবর রেট ১ শতাংশের নিচে আছে, যা কয়েক বছর আগে  ৪/৫ শতাংশ ছিল। লাইবরের সুদ হার উঠানামা করে। ফলে এর সুদহার বাড়লে পরবর্তীতে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে।”

তবে বিদেশি ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, “বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কেননা যেসব প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে তারা  রপ্তানিকারক অথবা আমদানি পরিপূরক পণ্য উৎপাদনকারী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেশ শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে।”

বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ প্রবাহ বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে (২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল) সব মিলে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ এসেছে ৫৫০ কোটি ডলার, স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। ২০১০ সালে ৩০ কোটি ২৭ লাখ; ২০১১ সালে ৯৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।

২০১২ সালে তা বেড়ে ১৫৮ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকে। ২০১৩ সালে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।

তবে বেসরকারি খাত বিদেশ ঋণে কোনো সমস্যা দেখছেন না পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, “নিজের ব্যালান্স শিট ভাল করতে যে কেউ তার পছন্দ মত উৎস থেকে ঋণ নিতে পারে। এটা তার মৌলিক অধিকার।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এ তসলিম  মুদ্রানীতির মাধ্যমে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।

বিশ্বব্যাংকের লিড ইকনোমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, “বিনিয়োগের যেসব বাধা রয়েছে তা সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে দূর করা যাবে না। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামো, দুর্নীতি ইত্যাদির ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। এসব  জায়গায় মুদ্রানীতির তেমন কিছু করার নেই।”

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর বড় অংকের স্থানীয়ভাবে ক্রয়কৃত বিল (আইবিপি) অনিষ্পন্ন আছে।

এর সমাধানে কমিটি গঠনের অনুরোধ  জানান তিনি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এসব বিল সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজেমী বলেন, “অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিদেশি ঋণ বাড়ছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাসান জামান বলেন, “জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য মুদ্রানীতির তুলনায় অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।”

আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ আলম সারোয়ার বলেন, “মুদ্রানীতির নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আছে। সব কিছুর প্রতিকার মুদ্রানীতির মাধ্যমে হয় না।”

আলোচনা সভায় সঞ্চালক বিআইডিএসের মহাপরিচালক এম কে মুজেরি। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষক মনজুর হোসেন।