‘সতর্ক ও বিনিয়োগবান্ধব’ মুদ্রানীতি

মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2014, 08:55 AM
Updated : 26 July 2014, 03:25 PM

তারল্য স্ফীতি কমিয়ে ও বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তি সহজ করে ঘোষণা করা এই মুদ্রানীতিকে গতবারের মতোই সতর্ক ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।

শনিবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গভর্নর আতিউর রহমান এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।

নতুন মুদ্রানীতিতে অতিরিক্ত তারল্য কমানোর জন্য ব্যাংকে রক্ষিত নগদ জমার স্থিতি (সিআরআর) ছয় শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ছয় শতাংশ করা হয়েছে।

আর বিনিয়োগ বাড়াতে সাশ্রয়ী বৈদেশিক বাণিজ্যিক ঋণ সহজতর করার কথা বলা হয়েছে এই নীতিতে।

এ ছাড়া মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর।

তিনি বলেন, “যেসব ব্যাংক ২৫ শতাংশের বেশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে তাদের নমনীয়ভাবে দেখা হচ্ছে। যেসব ব্যাংকের ২৫ শতাংশের কম বিনিয়োগ রয়েছে তাদের বিনিয়োগে উৎসাহী করা হবে। আর এবারের মুদ্রানীতি বিগত মুদ্রানীতির মতোই বিনিয়োগবান্ধব।”

মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে (প্রক্ষেপণ) সাড়ে ১৬ শতাংশ এবং সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।

নতুন মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে আতিউর রহমান বলেন, “এবারের মুদ্রানীতির ভঙ্গিটিও হবে বিগত মুদ্রানীতির মতোই সতর্ক ও বিনিয়োগবান্ধব।

“নতুন নতুন মুদ্রানীতি মুদ্রা ও পুঁজিবাজারে স্বস্তিকর স্থিতিশীলতা বজায় রেখে এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় স্থিতিশীল রেখে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন প্রয়াসে আস্থা ও উৎসাহ যোগানে অবদান রাখবে বলে আমি আশা করি।”

একইসঙ্গে জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের মুদ্রানীতির মাধ্যমে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান আতিউর রহমান।

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আর গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

নতুন মুদ্রানীতিতে বৈদেশিক উৎসের আমদানি অর্থায়নসহ বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে আতিউর রহমান বলেন, “বেসরকারি খাতের ঋণের এই প্রবৃদ্ধি জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে কোনো বাস্তবসম্মত উচ্চতর মাত্রা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত।”

নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।

বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে আতিউর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে সরকারের আর্থিক নীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির যথাযথ সমন্বয়ের জন্য নিয়মিত আলোচনা কার্যক্রম প্রথাগতভাবেই অব্যাহত থাকবে।

“তবে বেসরকারি খাতের জন্য বৈদেশিক উৎসের বাণিজ্যিক ঋণ গ্রহণ উন্মুক্ত থাকায় এবং ব্যাংকগুলোর কেনা টাকা-ট্রেজারি বন্ডের বৈদেশিক চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার কারণে বেসরকারি খাতের জন্য ঋণ যোগান অপর্যাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বস্তুত আর নেই।

“রপ্তানি উৎপাদনের উপকরণাদি সংগ্রহে অর্থায়নের জন্য সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) পরিমাণ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। চাহিদা বাড়লে ভবিষ্যতে এই তহবিলের পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে।”

এছাড়া দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশি মালিকানার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্থানীয় মুদ্রাবাজার থেকে চলতি মূলধনের পাশাপাশি মেয়াদি ঋণ গ্রহণও উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান।

“এসব কিছুই করা হয়েছে বিনিয়োগকে উৎসাহ দেবার লক্ষ্যে। পাশাপাশি এসব ঋণের ব্যবহার যথার্থ হচ্ছে কি না তাও বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট কর্তৃক নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকও মনিটর করবে।”

বিদেশি ঋণ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “সামনে অনেক বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। জাপান,চায়নাসহ অনেক দেশ বিনিয়োগ করবে। এসব প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হলে বিনিয়োগ বেড়ে যাবে।

“তখন বিদেশির পাশাপাশি দেশীয় ঋণও বাড়বে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।অবকাঠামো উন্নয়ন শুরু হলেই আরো বেশি ঋণের প্রয়োজন পড়বে।”