বিনিয়োগ পরিবেশে অনাস্থায় ঋণপ্রবাহে ধীর গতি

বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে ব্যাংকিং খাতের ঋণপ্রবাহে ধীর গতি বিরাজ করছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2014, 04:16 PM
Updated : 13 July 2014, 04:16 PM

একই সঙ্গে বিদেশি উৎস থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ গ্রহণের সুযোগ অবারিত থাকায় অভ্যন্তরীণ ঋণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তার গবেষণায় উঠে এসেছে।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যত কর্মকাণ্ড নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না।

গত ১০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) যুগ্ম পরিচালক বায়েজিদ সরকারের এই গবেষণা প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিআরপিডি’র মহাব্যবস্থাপক মো. নাসিরুজ্জামান।

গবেষণা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, “এই মুহূর্তে দেশের আর্থিক খাতের অধিকাংশ সূচক ইতিবাচক এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতাও রয়েছে। তারপরও ঋণপ্রবাহে ধীর গতি রয়েছে। এর অন্যতম কারণ, ঋণগ্রহীতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে যথেষ্ট আস্থা নেই।

“ব্যাংকগুলোর নতুন ঋণ বিতরণে অতিরিক্ত সচেতনতা এবং অস্বস্তিও ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”

এছাড়া স্বল্প সুদে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণের অবারিত সুযোগ থাকায় ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়ার চাহিদাও অনেক কম।

দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার নিয়মে আরও কড়াকড়ি আরোপ করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কাছে বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি। জানুয়ারি-জুন সময়ের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরলেও এপ্রিল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশে। একারণে ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে অলস তারল্য।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে অলস তারল্যের (যে টাকা থেকে ব্যাংকের কোনো ধরনের আয় হচ্ছে না) পরিমান দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত কমে গেলেও এ ধরনের অলস অর্থের পরিমান বেড়েই চলেছে।

২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমান ছিল ৬ লাখ ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা ২০১৪ সালের মার্চ শেষে অর্থাৎ তিন মাস পরে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪১ কোটি টাকায়।