বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর পদত্যাগ করলেও রেহাই মিলছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর।
Published : 05 Jul 2014, 08:54 PM
আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির কর্মীদের অভিযোগের মুখে থাকা চেয়ারম্যানের পদত্যাগপত্র পাওয়ার পরদিন শনিবার একথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
মুহিত জানিয়েছেন, রোববারের মধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত এই ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।
ব্যাংকের দায়িত্ব একজন ‘খ্যাতনামা ব্যাংকারকে’ দেয়া হচ্ছে বলে জানালেও তার নামটি প্রকাশ করতে রাজি হননি মন্ত্রী।
রাজধানীর তিনটি শাখায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়ম ধরার পড় বাংলাদেশ ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে গত ২৬ মে অপসারণ করে।
এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করা হলে অর্থমন্ত্রী ‘শিগগিরই’ পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলে আসছিলেন।
এর মধ্যেই শুক্রবার অর্থমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে পদত্যাগপত্র দিয়ে আসেন চেয়ারম্যান বাচ্চু, যার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পোস্টারও বের করেছিল ব্যাংককর্মীরা।
পদত্যাগপত্র পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশপাশি দুদকও তদন্ত করছে, তদন্ত চলবে।”
তদন্তে বাচ্চুর দোষ প্রমাণ পাওয়া গেলে রেহাই পাবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকে ভাবতে পারেন পদত্যাগ করেই তিনি পার পেয়ে গেলেন, সেটা ঠিক নয়।
“শুধু চেয়ারম্যান নয়, পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও যদি অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাবস্থায়ই এই ব্যাংকটির গুলশান, শান্তিনগর এবং দিলকুশা শাখায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকায় ঋণ বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাচ্চুর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। খ্যাতিমান একজন ব্যাংকারকে প্রধান করে বেসিক ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ আগামীকালই (রোববার) গঠন করা হবে।”
বেসিক ব্যাংকের সাত সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সরকার মনোনীত তিনজন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিজি নীলুফার আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার আহমেদ এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বোস।
অন্য তিনজন সদস্য হলেন- বাংলাদেশ স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক শ্যাম সুন্দর শিকদার, এআরএস লুবে বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম এবং উত্তরণের এর অ্যাসিট্যান্ট এডিটর আনিস আহমেদ।
বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকা সরকার মনোনীত তিনজনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- প্রশ্ন করা হলে মুহিত বলেন, “অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
সরকারি ব্যাংকগুলোতে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগকে এই দুর্নীতির জন্য অনেকেই দায়ী করছেন।
তবে অর্থমন্ত্রী এই ধরনের নিয়োগের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে মুহিত বলেন, “এতে দোষের কিছু নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বোর্ডে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ না দিলে ব্যাংক মানবিক হয় না।”
“রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া বোর্ড ভালো করেছে, আমাদের কাছে তার অনেক প্রমাণ আছে। তবে এ কথাও ঠিক যে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ভুলও হয়েছে, আর তার কাফফারাও দিতে হয়েছে,” এই স্বীকারোক্তিও আসে অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদও পুনর্গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।