নতুন রেকর্ড গড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন ২১০০ কোটি (২১ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে।
Published : 16 Jun 2014, 04:58 PM
সোমবার দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মূলত রেমিটেন্স প্রবাহ এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি রিজার্ভে রেকর্ড গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
চলতি মাসে এই পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ৬০ কোটি ডলার। ঈদুল ফিতরের আগে প্রবাসীরা আরো বেশি অর্থ দেশে পাঠাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।
তবে এরপর ৮ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১৭ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। পরে অবশ্য রিজার্ভ আবার বাড়তে থাকে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের রিজার্ভ স্থিতি ৩০০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। পাকিস্তানের ১০ বিলিয়ন ডলার।
ছাইদুর রহমান বলেন, “আমদানি বাড়ার পরও মূলত রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ভর করে রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।”
এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাত মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
আকুর পরবর্তী আমদানি বিল জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকবে বলে আশা করছেন ছাইদুর রহমান।
প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ। মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের বিল শোধ করা হয়েছে ৮ এপ্রিল। মে-জুন মেয়াদের দেনা পরিশোধ করতে হবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে।
ছাইদুর রহমান বলেন, রপ্তানির পাশাপাশি রেমিটেন্সের প্রবাহও ভালো। চলতি জুন মাসের ১৫ দিনে ৬০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
“বরাবরের মতই দুই ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন। তখন রিজার্ভ আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার।
২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল সেই রিজার্ভ বেড়ে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।
চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
অন্যদিকে এই ১১ মাসে সবমিলিয়ে রেমিটেন্স এসেছে ১২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও তা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৩ শতাংশ কম।
“তবে পুরো অর্থবছরের রেমিটেন্সের হিসাব যোগ হলে গত অর্থবছরের প্রায় সমান রেমিটেন্স দেশে আসবে,” বলেন ছাইদুর রহমান।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ডলার কিনেই চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
এদিকে বাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবারও ডলার কেনা হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সব মিলিয়ে বাজার থেকে ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার কেনা হল।
গত অর্থবছরের পুরো সময়ে কেনা হয়েছিল ৪৭৯ কোটি ডলার।
ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতেই বাজার থেকে ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানান ছাইদুর রহমান।
তিনি বলেন, “রমজানের ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি অর্থ দেশে পাঠাবেন।তারা যাতে সেই অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠান, সেটাকে উৎসাহ দিতেই বাজার থেকে ডলার কিনে দর স্থিতিশীল রাখা হচ্ছে।”