বেসরকারি খাতে পেনশন চালু হবে: মুহিত

সরকারি খাতের মতো বেসরকারি খাতেও পেনশন বা অবসরকালীন ভাতা চালুর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2014, 08:53 AM
Updated : 6 April 2014, 12:41 PM

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে শক্তিশালী করতে আসন্ন ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে এবিষয়ে ধারণা দেয়ার চেষ্টা থাকবে বলেও জানান তিনি।

রোববার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট মতবিনিময়ে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন।

তিনি বলেছেন, “সোশ্যাল সেফটি নেটের পরিবর্তে আমরা সোশ্যাল সিকিউরিটি হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। এজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালুর একটি উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে বেসরকারি কর্মকর্তারাও পেনশন পান।” 

তবে কোন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতে পেনশন দেয়া হবে সে সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত দেননি মন্ত্রী।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে একটি সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট চালুর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বেসরকারি খাতে পেনশন চালুর কথা চিন্তা করা হচ্ছে। বেসরকারি খাতের এই পেনশন স্কিমে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি বরাদ্দ মিলে সম্মিলিত তহবিল থাকবে, যা সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করা হবে। ওই বিনিয়োগের মুনাফা থেকে অবকাশকালীন ভাতা দেয়ার ধারণা নিয়ে আলোচনা চলছে।

এর আগে এনজিও খাতের প্রতিনিধিরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বাড়িয়ে এই কর্মসূচির কাঠামো পরিবর্তনের পরামর্শ দেন।

সভার শুরুতে মুহিত বলেন, “আসন্ন বাজেটে বেশ কিছু নতুন ব্যবস্থা আপনারা দেখতে পাবেন। এর মধ্যে বিশেষ হচ্ছে- মন্ত্রীদের প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষমতা বাড়ানো হবে।”

বর্তমানে পরিকল্পনামন্ত্রী ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের প্রকল্প অনুমোদন করতে পারেন। অন্য মন্ত্রীরা সাত কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের কারিগরি প্রকল্প অনুমোদন করতে পারেন। এর বেশি হলে তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠাতে হয়।

অর্থমন্ত্রী জানান, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত নীতিমালাতেও (পিপিআর) পরিবর্তন আসবে, যা নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে।

“যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য একটি মাস্টারপ্লান করা হচ্ছে।”

শিক্ষা খাতের বরাদ্দের সিংহভাগ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয় বলে উল্লেখ করে বণ্টনেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‍“শিক্ষক, শিক্ষার মান উন্নয়নে বরাদ্দ থাকে কম। আমি এবার এসব খাতে (শিক্ষক, শিক্ষার মান উন্নয়নে) বরাদ্দ বাড়াতে চাই।

“দূষণ কর (পলিউশন ট্যাক্স) চালুরও একটা উদ্যোগ থাকবে। তবে এটা খুব জটিল। এছাড়া মানব সম্পদ উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া কৃষিতেও কিছু পরিবর্তন আসবে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী নির্বাচনী সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চান।

কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মজীবী নারীদের বাসস্থান, সহজ যাতায়াত ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।  

ফাইল ছবি

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক জাফরুল্লাহ খান জনস্বার্থে ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে নেয়ার পরামর্শ দেন।

পাশাপাশি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজের টিউশন ফি ও আবাসিক ফি বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।

বর্তমানে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে টিউশন ফি ১৬ টাকা আর আবাসিক ফি ১০ টাকা।

নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য চলমান বৃত্তি প্রকল্প আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। সামাজিক গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে।”

এছাড়া জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের অফিসগুলোকে গ্রাহকবান্ধব করার পরামর্শ দেন তিনি।

এনজিও প্রতিনিধিদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- অ্যাকশন এইডের প্রধান নির্বাহী ফারাহ কবীর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোরনের (বাপা) প্রতিনিধি আবু নাসের খান ও আব্দুল মতিন, ব্র্যাকের প্রতিনিধি আসিফ সালেক, ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রতিনিধি স্টিফেন কোহলার।

এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, অর্থসচিব ফজলে কবীর, ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম ও এনবিআরের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।