রেমিটেন্স-রপ্তানি আয় ৫ বছরে দ্বিগুণ

নানা বাধা বিপত্তির পরও পাঁচ বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2013, 01:38 AM
Updated : 25 June 2013, 01:38 AM

আর অর্থনীতির এ দুই সূচকের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেড়েছে আড়াই গুণ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই তিন সূচকই দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত রেখেছে। গত পাঁচ বছরে গড়ে ৬ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনেও রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় ও রিজার্ভ বিশেষ অবদান রেখেছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এই তিন সূচকের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে খুশি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতির উপর দিয়ে কম ঝড় বয়ে যায়নি। বিশ্ব অর্থনীতির মহামন্দার মধ্যে আমরা দায়িত্ব নেই। সেই মন্দা কিন্তু এখনও পুরোপুরি কাটেনি।

“স্থানীয় পর্যায়ে দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা ছিল। বিরোধী দলের একের পর এক হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি করেছে।

“এতো কিছুর পরও পাঁচ বছরে রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় এবং রিজার্ভ বেড়েছে। আর এই তিন কারণেই আমাদের অর্থনীতির ভিত মজবুত হয়েছে”, বলেন মুহিত।  

পাঁচ বছর গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি পৃথিবীর অনেক দেশেই হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষ হওয়ার সাত দিন বাকি থাকতেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

২১ জুন পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।

অর্থবছরের বাকি সাত দিনের রেমিটেন্স যোগ হলে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।

পাঁচ বছর আগে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।

বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের ১১ মাসের তথ্য পাওয়া গেছে। এ সময়ে (জুলাই-মে) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে ২৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার দেশে এসেছে। যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।

জুন মাসের আয় যোগ হলে এবার মোট রপ্তানি আয় ২৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০০৭-০৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছিল ১৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। পরের বছরে আসে ১০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১০-১১ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে এসেছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৬৫ ও ১২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল  ১৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। পরের বছরে আসে ১৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে এসেছিল যথাক্রমে ২২ দশমিক ৯৩ ও ২৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।

সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।     

কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

“জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর দেনা পরিশোধের আগে রিজার্ভ সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।”

২০০৭-০৮ অর্থবছর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে স্থিতি ছিল ৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছর শেষে ছিল ৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ২০১০-১১ এবং ২০১১-১২ অর্থবছর শেষে বিদেশি মুদ্রার মজুদ ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৩৬ এবং ১৩ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার।

বিআইডিএসর গবেষণা পরিচালখ জায়েদ বখত

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বিবেচনায় প্রবাসীরাই এই পাঁচ বছর আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছিলেন। লিবিয়া, মিশরসহ মধ্যপাচ্যের কয়েকটি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও প্রতি বছর বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

“রপ্তানির ক্ষেত্রে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো সমস্যা ছিল। তাজরীন গার্মেন্টে আগুন ও রানা প্লাজা ধসে ব্যাপক হতাহতের পাশাপাশি পোশাক খাতে অসন্তোষ লেগেই আছে। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এরপরও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে।”

রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্সের বাড়ার কারণেই রিজার্ভ শক্ত ভিত্তি পেয়েছে বলে জায়েদ বখত জানান।