প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াতে দরকার ‘ইনসেনটিভ’: মির্জ্জা আজিজ

বাজেট ও সময়মতো মান সম্পন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ‘ইনসেনটিভ সিস্টেম’ চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2017, 11:13 AM
Updated : 7 June 2017, 03:38 PM

বুধবার বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮ প্রত্যাশা, প্রাপ্তি, চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষকআলোচনা সভায় প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “আমাদের বাজেটের আকার বাড়ছে। কিন্তু প্রত্যেক বছর আনুপাতিক হারে ব্যয় কমছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেটের ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছিল। এরপর প্রত্যেক বছর কমতে কমতে ২০১৬ তে বাজেট ব্যয় ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে।”

মির্জ্জা আজিজুল বলেন, “খাতওয়ারি পর্যালোচনা করলেও একই চিত্র দেখা যাবে। প্রায় প্রতিটি খাতেই একই অবস্থা। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন হচ্ছে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা।”

সাবেক এ উপদেষ্টা মনে করেন প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ইনসেনটিভ সিস্টেম চালু করা দরকার।

“কোনো কর্মকর্তা যদি ভাল কাজ করেন তার জন্য কোনো স্বীকৃতি নেই। আবার কেউ যদি কোনো কাজ না করে বা খারাপ কাজ করে তাহলে তার জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেই।

“তাই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি বাজেট বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যারা জড়িততাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে তাদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা তাদের জন্য ইনসেনিটিভের ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের বাজেটে পিপিপির জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এজন্য একটি কার্যালয়ও আছে কিন্তু তারপরও অগ্রগতি হয়নি। এর কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য এনজিওদের সম্পৃক্ত করা হলে ভালো হবে তবে তা কী মডেলে হবে সে বিষয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন।”

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল বায়েস এবং আইআইডির প্রধান নির্বাহী সাঈদ আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক অ্যাডভোকেসির পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।

অধ্যাপক বায়েস তার উপস্থাপনায় নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘মধ্যবিত্ত নির্ভর বাজেট’ অভিহিত করে বলেন, “সরকারের আয় পুরোপুরি মধ্যবিত্তের আয়-ব্যয় এবং নিম্নবিত্তের ব্যয়ের উপর ধার্য করা পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল।”

তবে কৃষি উপকরণের ওপর শুল্ক, চাল ও দেশজ ফসল আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “দেশে বাণিজ্যিক কৃষি ক্রমশ বাড়ছে। এক্ষেত্রে তাই যথেষ্ট প্রণোদনা থাকা প্রয়োজন, যা নতুন বাজেটে তেমন নেই।”

আইআইডির প্রধান নির্বাহী সাঈদ আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাশা ও প্রবৃদ্ধিমুখী, প্রাক-নির্বাচনী, শিক্ষাখাতে আপসমুখী ও মধ্যবিত্তনির্ভর।

“বাজেটে প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব হলেও বড় অবকাঠামোর প্রকল্পগুলোতে দেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তেমন না থাকায় সরকারের সেই উদ্দেশ্য কতটা সফল হবে তা নিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ অবস্থা নিরসনে প্রকল্পভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম, ব্র্যাক মাইক্রোফিন্যান্স ও অতিদরিদ্র কর্মসূচির পরিচালক শামেরান আবেদ, ব্র্যাক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির প্রোগ্রাম হেড মো. আরিফুল আলম এবং কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম হেড ফারহানা হাফিজ।