ব্যাংক হিসাবের বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি মন্ত্রীর

ব্যাংক হিসাবের ওপর আরোপিত বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি এবার সরকারের এক মন্ত্রীর কাছ থেকে এল।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2017, 07:02 AM
Updated : 7 June 2017, 07:02 AM

বুধবার সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “সঞ্চয় এবং ফিক্সড ডিপোজিটের ওপর কর আরোপ করা ঠিক হবে না।

“সাধারণ মানুষ, স্বল্প বেতন পাওয়া মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। এখানে শুল্ক আরোপ করা ঠিক হবে না। নিম্ন আয়ের মানুষকে অব্যাহতি দিয়ে ধনাঢ্যদের ওপরে কর আরোপ করা হোক।”

মোজাম্মেল হক বলেন, “আমি কেবিনেটের সদস্য। কেবিনেটে এই বাজেট পাস হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলা নৈতিকতা বিরোধী। তবে আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাদের কথা বলতে হবে।”

সঞ্চয়পত্রের সুদ না কমানোরও দাবি জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ১ জুন ঘোষিত বাজেটে ব্যাংক গ্রাহকদের ওপর বাড়তি হারে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করার পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

সেখানে বলা হয়েছে, বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে।

পাশাপাশি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরাও আবগারি শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করেছেন না। তারা বলছেন, শুল্ক বাড়লে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে।

জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় কয়েকজন সাংসদও অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “এটাতো খামোখা কথা। এটা কোনো নতুন বিষয় নয়। আমরা বরং সীমা পরিবর্তন করেছি। এবার সীমা বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে কিছুটা রেটও বাড়ানো হয়েছে।”

বাজেটে এই বর্ধিত আবগারি শুল্কের সমালোচনার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মঙ্গলবার এক ইফতার অনুষ্ঠান থেকে দাবি করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “২০১৬ সাল ছিল আওয়ামী লীগের ব্যাংক চুরির বছর। ব্যাংকের টাকা প্রতিনিয়ত চুরি করেছে, চুরি করতে করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরি করেছে, ব্যাংকের টাকা চুরি করে তারা পাচার করেছে।”

বিএনপি নেত্রীর এ মন্তব্যের জবাবে সংসদে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, “খালেদা জিয়া আর তার পুত্র যে কাজে পারদর্শী, সেই কথাই উনি বলবেন। কিন্তু কিভাবে চুরি হল সেটা বলতে পারেন নি। উনার মাথা খারাপ, উনাদের সময় ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট হত। আর এখন ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট হয়।

“দেশের উন্নয়নের খবর রাখে না বলেই খালেদা জিয়া ইচ্ছামতো কথা বলছেন।”

এসময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যত বধ্যভূমি আছে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ হয়েছে সব জায়গায় একই ধরনের স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে। সব মুক্তিযোদ্ধার কবর একই ডিজাইনে করার প্রকল্প পাস হয়েছে। যাতে ১০০ বছর পরেও নতুন প্রজন্ম বুঝতে পারে এটা একটা মুক্তিযোদ্ধার কবর।

“পাকিস্তানি ও রাজাকারদের ঘৃণ্য কাজ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য ঘৃণাস্তম্ভ করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে মানুষ ঘৃণা জানাতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করার জন্য প্রতি জেলা-উপজেলায় স্মৃতিস্তম্ভ করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।”

বুধবার প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য দীপু মনি।

আলোচনায় তিনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, “ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে অনেক মধ্যবিত্ত সন্তান পড়ে। এই প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনলে একটা বৈষম্যের বিষয় এসে যেতে পারে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।”

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট হিলারি ক্লিনটনের যোগসাজস তদন্তে দেশটির উদ্যোগ নিয়েও কথা বাংলাদেশের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ড. ইউনূসের বিষয়ে হিলারি ক্লিনটন কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল সে বিষয়ে তাদের সিনেট কমিটি তদন্ত করছে। পশ্চিমা বিশ্ব কিছু কিছু দেশে তাদের ডমিনেশন প্রতিষ্ঠার জন্য লোক খুঁজে বেড়ায়। আমাদের দেশে কিছু মানুষ বসে থাকে, তারা সেই তল্পিবাহক হবেন এবং দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবেন।

“পশ্চিমা প্রভুদের তল্পিবাহকরা আর কেউ নয়, এরা নব্য মীরজাফর। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।”