‘সীমিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তৈরি প্রাক্কলনে অর্থনীতির চলমান গতি-প্রকৃতিসহ সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলে বেসরকারি এই গবেষণা সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ।
শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “অর্থবছরের সীমিত আকারের তথ্য দিয়ে বিবিএস একটি প্রাথমিক প্রাক্কলন তৈরি করেছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের এ প্রাথমিক প্রাক্কলনের সাথে অর্থনীতির যে গতি-প্রকৃতি দেখছি তার কিছুটা হলেও অমিল দেখা গেছে।”
বিবিএসের প্রাক্কলন অনুযায়ী, জুনে শেষ হতে যাওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
সেই সঙ্গে অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় এক হাজার ৬০২ডলারে উন্নীত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৩৮ ডলার বেশি।
প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পেছনে নির্মাণ, শিল্প ও কৃষি খাতের অবদানের কথা তুলেধরেছে বিবিএস। সেইসঙ্গে সেবা খাতেও বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি ও সার্বিক বিনিয়োগ বাড়বে বলা হয়েছে।
“এরপর থেকে রপ্তানির গতি কমে গেছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সঠিক তথ্য আসেনি, এটা বিবেচনায় নিতে হবে।
বিবিএসের সাময়িক প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সে হিসেবে এবার জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান হবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
বোরো উৎপাদন বাড়ার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিডিররিসার্চ ফেলো বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে শস্য উৎপাদনে, বিশেষ করে হাওড়ের বোরো উৎপাদন বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।
“ফলে এবার প্রায় ১৬ লাখ টন ধান কম উৎপাদন হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। অর্থাৎ এক্ষেত্রে (প্রাক্কলন) কিছুটা বেশি ধরা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।”
তাছাড়া সার্বিক বিনিয়োগ কিছুটা বাড়লেও প্রায় পুরোটাই সরকারি বিনিয়োগ হওয়ায় পুঁজির উৎপাদনশীলতা একই রকমই আছে বলে মনে করে সিপিডি।
তৌফিকুল ইসলাম বলেন, “সার্বিভাবে চলতি অর্থবছরের জন্য যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, তার পুরোটা বাস্তবায়নের হিসাব ধরেই এ হিসাব করা হয়েছে। সংশোধিত বাজেটের কোনও তথ্যই এখানে নেই। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের যে বাজেট দেওয়া হয়েছে এর পুরোটাই বাস্তবায়ন হবে এরকম হিসাব করেই তথ্য একীভূত করা হয়েছে।
“সুতরাং এসব বিবেচনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা শেষ পর্যন্ত কিছুটা কমে আসতে পারে।”
‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৬-১৭: তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব ও অস্থিরতার কথা তুলে ধরা হয়।
তৌফিকুল বলেন, “এক্ষেত্রে দেশের জন্য একটি শক্তিশালী ব্যাংক কমিশন জরুরি ভিত্তিতে দরকার। ব্যাংকিংয়ের জন্য সংস্কারের যে প্রয়োজন আছে তা নিয়ে কমিশন কাজ করতে পারে।”
পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার জন্য নেওয়া কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো উপর জোর দিয়েছে সিপিডি।
আগামী অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মূসক হার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে সিপিডি।
তৌফিকুল বলেন, “এক্ষেত্রে ভ্যাট কিছুটা কমিয়ে আনলে যে ঘাটতি হবে তা পুষিয়ে নিতে সরকার সিমেন্টসহ আরও কয়েকটি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিলে তা যুক্তিযুক্ত হবে না। এ সিদ্ধান্ত বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
আগামী বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর জোর দেন এবং সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর প্রস্তাব দেন তিনি।
শস্য উৎপাদন বাড়াতে বোরোর পাশাপাশি আউশ চাষেও প্রণোদনা দেওয়াসহ কৃষি খাতে একটি ‘প্রাইস কমিশনের’ সুপারিশ করা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসময় উপস্থিত ছিলেন।