হাওরে ফসলহানির প্রভাব পড়বে না চালের দামে: খাদ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশে বছরে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার তথ্য তুলে ধরে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, হাওরে বন্যার কারণে উৎপাদন ৬ লাখ টন কমলেও তাতে চালের বাজারে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2017, 11:50 AM
Updated : 26 April 2017, 12:11 PM

তবে হাওরের ফসলহানিকে ব্যবহার করে চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা অসাধু ব্যবসায়ীরা করতে পারেন বলে শঙ্কা রয়েছে তার।

ব্যবসায়ীদের সেই ধরনের চেষ্টা না করতে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি গণমাধ্যমকে আতঙ্ক না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

এপ্রিলে হাওরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকের বোরো ধান। যে সব ক্ষেত তলিয়ে গেছে, তা থেকে আট লাখ টন চাল উৎপাদন হত বলে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন বলে আসছে।

ফলে চালের দাম বেড়ে যাবে বলে নানা মহল শঙ্কা প্রকাশ করছে। বুধবার ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে সে শঙ্কা উড়িয়ে দেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল।

তিনি বলেন, “হাওরাঞ্চলে বোরোর ক্ষতি হয়েছে ধরে নিলাম ছয় লক্ষ মেট্রিক টন। এতে করে কী আমাদের একেবারে খাদ্য মজুদের ক্ষেত্রে বিপর্যয়.. এমন কী অবস্থা সৃষ্টি হবে তা আমি বুঝি না!”

চলতি বোরো মৌসুমে ৭ লাখ টন ধান এবং ৮ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এ বছর বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার টন।

নেত্রকোণার কয়রা হাওরে ডুবে যাওয়া আধাপাকা ধান কেটে রাখা হচ্ছে বাঁধে। মঙ্গলবারের ছবি।

মন্ত্রী জানান, দেশে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দেশের মানুষের প্রয়োজন হল ২ কোটি ৯০/৯২ লাখ মেট্রিক টন। বছরে ১৫ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল দেশে মজুদ আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “খাদ্য ঘাটতি কোনো কারণ নেই। কাজেই এ ব্যাপারে জনমনে কোনো প্যানিক সৃষ্টি করারও কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।”

তবে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টার কথাও বলেন তিনি।

“কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, মজুতদার যারা, অসাধু মিল মালিক যারা, তারা অহেতুক একটা প্যানিক সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।”

‘আতঙ্ক সৃষ্টি’ হওয়ার মতো কোনো সংবাদ প্রচার না করতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন কামরুল।

সরকার হাওরাঞ্চলের দুর্গতদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে ‘সেমস গ্লোবালের’ আয়োজনে খাদ্যপণ্য এবং কৃষিজাত উপকরণের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী।

তিনি ‘দ্বিতীয় ফুড অ্যান্ড এগ্রো বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-২০১৭’; ‘দ্বিতীয় এগ্রোক্যাম বাংলাদেশ এক্সপো-২০১৭’ এবং ‘দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশনাল পোল্ট্রি অ্যান্ড লাইভস্টোক বাংলাদেশ এক্সপো-২০১৭’ উদ্বোধন করেন।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম, বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক এম এ মতিন, বাংলাদেশে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট শওকত আলী সরকার।

আয়োজকরা জানান, চার দিনের ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রো, এগ্রোক্যাম এবং পোল্ট্রি অ্যান্ড লাইভস্টোক ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-২০১৭’ আগামী শনিবার শেষ হবে।

আন্তর্জাতিক এ প্রদর্শনীতে স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড, চীন, তুরস্ক, ভারত ও বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য, কৃষিজাত উপকরণ উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রায় ১২০টি প্রতিষ্ঠান ১৬০টি স্টলে অংশ নিচ্ছে।

প্রদর্শনীতে খাদ্যপণ্য, পানীয়, কৃষিজাত পণ্য, পোল্ট্রি পণ্য, বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ, পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিনারিজ, রাসায়নিক উপকরণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিপণন ও প্রদর্শনী করা হচ্ছে।