উচ্চ ক্যালরি, লবণ ও চিনিযুক্ত এসব তৈরি খাবারকে তামাকের সঙ্গে তুলনা করে এসব খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারেও লাগাম টানতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘তামাকের ন্যায় অস্বাস্থ্যকর খাবারে সারচার্জ আরোপ : প্রয়োজনীয়তা ও করণীয় শীর্ষক’ এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই দাবি আসে।
‘ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিঊবিবি)’ আয়োজিত এ সভায় উচ্চ ক্যালরি, লবণ বা চিনি যুক্ত বার্গার, ফ্রায়েড রাইস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকসকে ‘জাংক ফুড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরামর্শক মোস্তফা জামান বলেন, “পণ্যের মূল্যমান ঠিক রেখে অতিরিক্ত কর দেওয়াতে বাধ্য করতে হবে জাংক ফুড কম্পানিগুলোকে। সেই টাকায় অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করানো হবে।”
‘জাংক ফুড’র বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ প্রধান অধ্যাপক আবু সাইদ বলেন, “জাংক ফুডের উপর তামাকের চেয়ে বেশি কর আরোপ করতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে ‘অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিজ্ঞাপন এবং জনস্বার্থে বিরূপ প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে ডাব্লিউবিবি।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ৬১ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক রোগে (ছোঁয়াচে নয় এমন রোগ) আক্রান্ত। অসংক্রামক রোগের কারণ হিসেবে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্ব পেলেও পাচ্ছে না অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের বিষয়টি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নেটওয়ার্ক এনসিডির ২০১০ সালের ‘রিস্ক ফ্যাক্টর সার্ভে’ উদ্ধৃত করে অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা তামাক ব্যবহারের কারণের চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়।
অধ্যাপক সাইদ বলেন, “তামাকজনিত যেসব রোগ হয়ে থাকে, জাংক ফুডের কারণেও সেই একই রোগ হয়ে থাকে। ফলে সব জাংক ফুডের উপর ‘স্বাস্থ্যকর’ আরোপ করা উচিৎ।”
মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করা হলেও তার কার্যকারিতা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে।
শক্তিশালী নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে খাবারের বিজ্ঞাপনে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া নিষিদ্ধ করার দাবি জানান বারডেমের ল্যাবরেটরি বিভাগের পরিচালক ডা. শুভাগত চৌধুরী।
তিনি বলেন, “বিজ্ঞাপনে এমন কিছুই দেখানো যাবে না যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়।
“টেলিভিশনে প্রচারিত সকল বিজ্ঞাপনই অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের এবং উদ্ভট ও অবৈজ্ঞানিক। বিজ্ঞাপন যেহেতু বন্ধ করা সম্ভব নয়, তাই বিজ্ঞাপনে কী বলা যাবে আর কী বলা যাবে না, তা শক্তভাবে মনিটর করতে হবে।”
অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, “খাদ্যদ্রব্যের বিজ্ঞাপন শুধু তখনই দেওয়া যাবে, যখন তা সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যকর হবে।”
ডাব্লিউবিবি-এর গবেষণাপত্রে বেশ কয়েকটি পণ্যের বিজ্ঞাপনে অবৈজ্ঞানিক প্রচারণার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
সভায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের অধ্যাপক খুরশিদা খানম বলেন, “শিশুরা টেলিভিশনে যা দেখে তাই বিশ্বাস করে কারন তারা সত্য মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারে না।
বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তারকাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন বক্তারা।
স্কুলশিশুদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনের প্রবণতা তুলে ধরে শুভাগত চৌধুরী বলেন, “স্কুল থেকে আমাদের এই আন্দোলন শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতন করতে হবে।”
হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনেও জাংক ফুড বিক্রির চিত্রে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।