জলবায়ু পরিবর্তন: কৃষকদের দক্ষ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাওয়াতে কৃষকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে কৃষিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2016, 07:38 AM
Updated : 29 Sept 2016, 07:55 AM

তিনি বলেছেন, বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা কৃষির সামনে ‘বড় চ্যালেঞ্জ’।

সেজন‌্য তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রতিকূল জলবায়ু সহনশীল শস্যের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন এবং কৃষি সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ কৃষির বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে বলেছেন।

“কৃষকরা যাতে পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলতে পারে সেজন্য তাদের কৃষি তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমি দেশের কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।”

বৃহস্পতিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের পঞ্চম জাতীয় কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক কৃষি কনফারেন্সে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।

কৃষি উৎপাদন ও বিপণনে  পণ‌্যের বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কৃষিবিদদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, “উন্নয়ন ও উদ্ভাবন চলমান প্রক্রিয়া। তাই আপনাদেরকেও উদ্ভাবনী ও গবেষণা প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষি খাতের অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে হলে কৃষি উৎপাদন ও বিপণনে বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই।”

কৃষির উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষির ক্রমবর্ধমান উৎপাদনের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সরকার উন্নতজাতের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ, কৃষি উপকরণে প্রণোদনা, সুষম সারের ব্যবহার নিশ্চিত করা, কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রবর্তন ও কৃষকের ব্যাংক অ‌্যাকাউন্ট খোলা, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ সরবরাহ, কৃষি গবেষণা, কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ বহুমুখী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

“ফলে চিরাচরিত খাদ্যঘাটতির দেশ বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স¦য়ংসম্পূর্ণই নয়- খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। আমি জেনে খুশি হয়েছি, বর্তমানে বিশ্বের ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ এবং সবজি উৎপাদনে তৃতীয়।”

আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দারিদ্র্য হ্রাস করে খাদ্যে ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।

“এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনকে স্থায়ী ও টেকসই করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন কৃষি শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার মান উন্নয়ন। আধুনিক ও পরিবেশ-বান্ধব কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও কৃষক ভাই-বোন এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠির দোরগোড়ায় তা পৌঁছে দেওয়া।” 

বক্তব্যের শুরুতে লিখিত বক্তব্যের বাইরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি কৃষকের সন্তান তাই কৃষিবিদদের অনুষ্ঠানে আসতে ভালো লাগে।”

আর বক্তৃতার শেষে বলেন, “আমি এখনই কিশোরগঞ্জের হাওরে যাব। কৃষকের কাছে যাব। তাই আপনাদের সাথে বেশিক্ষণ থাকতে পারছি না।”

রাষ্ট্রপতি দুদিনের সফরে নিজের জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের মিঠামইন যাচ্ছেন বৃহস্পতিবার। শনিবার তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

কেআইবি প্রাঙ্গণে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেআইবির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক, কেআইবির মহাসচিব মোহাম্মদ মোবারক আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অন‌্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।