প্রধান সমুদ্রবন্দর নিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হলেও কেন্দ্রের ‘অবহেলায়’ খেদ রয়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের।
Published : 04 Sep 2016, 07:59 PM
রোববার চট্টগ্রাম নগরীতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সঙ্গে এক মধ্যাহ্ন ভোজে আলোচনায় নিজেদের ‘বঞ্চনার’ কথাই উঠে আসে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কথায়।
“উই আর দ্য ফাইটার। আসলে আমরা এখন যারা চট্টগ্রামে ব্যবসা করছি, তারা সবাই মূলত যুদ্ধ করছি,” নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাদের খান।
তিনি বলেন, “আলোচনা করেও তেমন ফল হয় না। নীতি-নির্ধারকদের কাছে এসব কথা পৌঁছায় না।”
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম, সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরীসহ শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের কণ্ঠেও ছিল একই সুর।
তারা চট্টগ্রামের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কাছে তা তুলে ধরতে জাতীয়ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
তাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পাদক তৌফিক খালিদী বলেন, “চট্টগ্রামের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
“বন্দর এবং যোগাযোগ খাতের বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই নীতি- নির্ধারকদের জানাতে হবে। সমাধান আসবেই।”
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক ও বর্তমান সভাপতির পাশাপাশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদকের আমন্ত্রণে এই মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব, ইস্পাহানি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা সালমান ইস্পাহানি, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, জুনিয়র চেম্বারের সাবেক সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত প্রমুখ।
তাদের আলোচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রামের গুরুত্ব, চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ও রেল যোগাযোগ, শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গণমাধ্যমে ভূমিকাসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো, বে টার্মিনাল নির্মাণ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ডবল রেল-লাইন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের জন্য কিছু করা মানে আসলে দেশের জন্যই করা। কারণ চট্টগ্রাম হল বাংলাদেশের ‘বিজনেস হাব’।
“কাট্টলী সংলগ্ন অংশে চ্যানেলের ড্রাফট ১৩-১৪ মিটার। সেখানে বে-টার্মিনাল নির্মাণ করা গেলে পণ্য লাইটার (ছোট জাহাজে করে বন্দরের জেটিতে নেওয়া) করতে হবে না। সরাসরি জেটিতে পণ্য নামিয়ে সারাদেশে পাঠানো যাবে।”
চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে যন্ত্রপাতির স্বল্পতার দিকটিও তুলে ধরেন বন্দর ব্যবহারকারীদের অন্যতম এই নেতা।
“কিনব-কিনব করে এখনও যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন চট্টগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ব্রিটিশ আমলে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রাম। সেটা ছিল শুধু বন্দরের কারণে।
“অথচ এখনও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে সড়ক পথে ছয় ঘণ্টার মতো সময়। রেলপথে ডবল লাইনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। শুধু রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত নিয়মিত করলেও দ্রুত যাতায়াত সম্ভব হত।”
রাজধানীকেন্দ্রিক কার্যক্রম নিয়েও অসন্তোষ ঝরে বন্দর নগরীর এই ব্যবসায়ীর কণ্ঠে।
“বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অফিস এখানে, সব কাজ এখানে। কিন্তু বোর্ড মিটিং হয় ঢাকায়। এভাবে সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে।”
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমও বলেন, “অনেক সরকারি সংস্থার সভা ঢাকায় করতে হয়, কারণ মন্ত্রীরা এখানে আসতে চান না।”
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি আবু তৈয়ব বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাড়লেও বর্তমান পরিস্থিতি ভালো নয়। অফ ডকগুলোর অবস্থাও ভালো নয়।
“আগে ২-৩ দিনে পণ্য খালাস করা যেত। এখন সময় লাগে ৭-১০ দিন। তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা হয়ত কোনোভাবে যোগাযোগ করে পণ্য ছাড় করাচ্ছে। খাতুনগঞ্জের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ।”
“চট্টগ্রাম বন্দর দেশের একটি অমূল্য সম্পদ। কিন্তু একে কখনও সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি,” বলেন আবু তৈয়ব।
ইস্পাহানি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ইস্পাহানি বলেন, শিক্ষাখাতে বেসরকারি উদ্যোগে অনেক কাজ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ টিচিং মেথড’ এর সূচনা ঘটাতে হবে। এতে শিক্ষার মান ও সুযোগ অনেক বাড়বে।
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে জরুরি। তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভালো মানের শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
“আমাদের লক্ষ্য দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া। তথ্যই পারে অনেক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে।”
র্যাডিসন হোটেলের এই অনুষ্ঠানে অতিথিদের হাতে উপহার হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রকাশনা ‘টার্নিং পয়েন্টস : গ্লোবাল এজেন্ডা ২০১৬’ তুলে দেন সম্পাদক তৌফিক খালিদী।
এছাড়া তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিপিএল প্রকাশিত একগুচ্ছ বই তাদের উপহার দেন।
অনুষ্ঠানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি, চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিন্টু চৌধুরী, সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ ইকবাল শাহরিয়ারও ছিলেন।