বিশ্বাস করুন, প্রবৃদ্ধি ৭% হবেই: মুস্তফা কামাল

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জন হওয়া নিয়ে যারা সংশয় প্রকাশ করেছেন, তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2016, 11:51 AM
Updated : 23 April 2016, 12:45 PM

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি পর্যালোচনায় তাত্ত্বিক, গবেষক ও নীতি নির্ধারকদের নিয়ে শনিবার রাজধানীতে এক সম্মেলনে সরকারের প্রাক্কলনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

মুস্তফা কামাল বলেন, “অনেকের সন্দেহ, আমরা এবার ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব না। যাদের সন্দেহ, তাদের বলছি আমাদের ওয়েবসাইটে যান সেখানে বিস্তারিত দেওয়া আছে।

“আমাকে ও প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করুন।”

২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.০৫ শতাংশ হবে দিন দশেক আগে পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে জানান। বাজেটেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল।

তবে বিশ্ব ব্যাংকের ছয় মাসের ও এডিবির নয় মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।আইএমএফ বলেছে, ৬ দশমিক ৩ শতাংশের কথা।

মুস্তফা কামাল বলেন, “চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকসহ কে কি বললো, তা বছর শেষে বুঝা যাবে।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) আয়োজনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘দ্য বাংলাদেশ জার্নি’ শীর্ষক দুদিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

প্রাক্কলিত জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের চেয়েও কম বিনিয়োগ নিয়ে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম আমাদের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।”

৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে সাধারণত এর ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, “এবার আগের অর্থবছরের তুলনায় পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়ে জিডিপির অনুপাতে ২২ শতাংশের কাছাকাছি বিনিয়োগ হয়েছে।

“এখন আমাদের উন্নয়ন স্তরে কিছুটা বৈষম্য হচ্ছে, সরকার তা নিরসনের চেষ্টা করছে। যাদের আয় রোজগার বেশি তাদের ওপর বেশিহারে করারোপ করছে।”

ভবিষ্যতে নিত্যপণ্যের ওপর শুল্কহার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বক্তব্য দেন।

তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, “সনাতনী চিন্তাধারায় একটা জাতির পরিবর্তন আসে না। এ জন্য দরকার সৃষ্টিশীল উন্নয়ন কৌশল। কোনও সৃজনশীল আইডিয়া টাকার অভাবে পড়ে থাকে না।

“বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নতুন নতুন উন্নয়ন কৌশল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছি, টাকার অভাবে পড়িনি। এমনকি গত পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা শুধুমাত্র বেসরকারি খাত থেকেই প্রায় ৮ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলারের যোগান পেয়েছি।”

আড়াই বছর আগে নেওয়া পায়রায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জন্যও ২৫০ কোটি ডলারের অর্থের যোগান নিশ্চিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের উপর জোর দেন হোসেন জিল্লুর।

“আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার মানে কিছুটা উন্নয়ন হলেও মাধ্যমিক শিক্ষার মান বাড়েনি। এ মূহূর্তে আমাদের কারিগরিকে অগ্রাধিকার শিক্ষা হিসেবে বাছাই করতে হবে।”

অনুষ্ঠানের সভাপতি বিআইডিএসের মহা-পরিচালক কে এ এস মুর্শিদ তার উপস্থাপিত প্রবন্ধে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে পাঁচটি হুমকি শনাক্ত করেন।

এগুলো হলো- দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ন ও শিক্ষিত বেকারত্বের হার বৃদ্ধি।