শনিবার বেইজিংয়ে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন এই ব্যাংকের উদ্বোধন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
ওয়াশিংটনের বিরোধিতা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, ফিলিপিন্স ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিত্র দেশ এই ব্যাংকে যোগ দিতে সম্মতি জানিয়েছে। তাদের এই অবস্থানকে দেখা হচ্ছে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতার স্বীকৃতি হিসেবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, “এশিয়ায় মৌলিক অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা সত্যিকার অর্থে খুব বেশি।”
এআইআইবি ‘উচ্চ মানসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী’ প্রকল্পে বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে কার্যক্রম শুরু করবে নতুন এই ব্যাংক। প্রথম পাঁচ থেকে ছয় বছরে গড়ে এক থেকে দেড় হাজার কোটি ডলার করে ঋণ দেবে তারা।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের নেতৃত্বে এআইআইবির যাত্রা শুরুতে অভিনন্দন জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
এডিবি প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বার্তায় বলা হয়, “এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত জ্ঞানের আলোকে এবং উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোয় ৩১টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এডিবি ঘনিষ্ঠভাবে এআইআইবিকে সহযোগিতা করবে।”
প্রাথমিকভাবে ৫৭টি দেশের যোগান দেওয়া ১০০ বিলিয়ন ডলার মূলধন নিয়ে কাজ শুরু করা এআইআইবি'র মূলধন এডিবির মোট তহবিলের তিন ভাগের দুই ভাগ এবং বিশ্ব ব্যাংকের মূলধনের অর্ধেক।
এআইআইবি এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করলেও এডিবি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই অঞ্চলের দেশগুলোয় দারিদ্র্য দূরীকরণ, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক ও জন-প্রশাসনে খাতের উন্নয়ন বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করে থাকে।
এডিবির তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ার অবকাঠামো খাতে এখন থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৮০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। অথচ সংস্থাটি বছরে মাত্র এক হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়ে থাকে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেছিলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের বিষয়টি তো একেবারেই আলাদা। তারা সারা বিশ্বে বিনিয়োগ করে থাকে। এআইআইবি তো এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করবে।
“সে প্রেক্ষাপটে এডিবি কিছুটা বিচলিত মনে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এতো বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন যে, আমরা এআইআইবির সদস্য হলে এডিবি মোটেই আমাদের ওপর মন খারাপ করবে না। সে কারণে তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হবে না।”
এআইআইবির মনোনীত প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন গত বছরের ১৪ নভেম্বর ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। ব্যাংকটি প্রথম বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে বলে সে সময় জানিয়েছিলেন তিনি।