‘ঋণের চাহিদা কম, সঙ্গে খেলাপির ভার’

ঋণগ্রহীতা যেমন কম ছিল, তেমনি আবার খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার ভারও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে ২০১৪ সালে বহন করতে হয়েছে বলে এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2015, 07:50 PM
Updated : 22 Nov 2015, 07:50 PM

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজেমেন্টের (বিআইবিএম) এক বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, কয়েকটি বড় গ্রুপের মধ্যে বিনিয়োগ ঘুরপাক খাওয়া এবং একই খাতে অতিরিক্ত ঋণ বিতরণের মতো চ্যালেঞ্জও ছিল গত বছর।

রোববার বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী এ বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলেন, চলতি বছরও একই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে ব্যাংক খাতকে।

রাজধানীর মিরপুরে দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন গভর্নর ও বিআইবিএমের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আতিউর রহমান।

ব্যাংক খাতের সার্বিক কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা এবং ব্যাংকারদের সঙ্গে একাডেমিশিয়ানদের যোগাযোগ স্থাপন করা এই সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

সম্মেলনে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন।

তৌফিক আহমেদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ২০১৪ সালের পর্যালোচনা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সতর্কতামূলক নানা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ঋণ চাহিদার ধীর প্রবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, একাধিক ব্যাংকের কয়েকটি বড় গ্রুপে বিনিয়োগ, একই খাতে অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ, ঋণ গ্রহীতাদের রেটিং নেয়ার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলগুলোর ব্যবহার না হওয়ার মত চ্যালেঞ্জে ভুগেছে।

বিআইবিএম মহাসচিব তথ্য তুলে ধরে বলেন,২০১৪ সালের শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। ওই সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের।

ঋণ আমানত অনুপাত ছিল ৭০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭৮ শতাংশ।

“এতে স্পষ্ট হয় যে ব্যাংক খাতে বিনিয়োগযোগ্য অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। ২০১৪ সালে ব্যাংকগুলো পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, আমদানি অর্থায়ন এবং কয়েকটি বড় শিল্পে ঋণ বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।”

২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০১৪ সাল শেষে দাঁড়িয়েছিল ১১ দশমিক ৬ শতাংশে।

তবে ঋণ ও আমানতের সুদ হারের ব্যবধান এসময়ে কমেছে, যা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তৌফিক আহমেদ।

তিনি মনে করেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।

“বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য প্রকৃতপক্ষে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে যেসব অনিয়ম ঘটেছে, তাতে প্রমাণিত হয়েছে এসব ব্যাংকে পরিদর্শন বা নিয়ন্ত্রণ পুরোটা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই।”

বিআইবিএমের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাণিজ্য অর্থায়নে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে রয়েছে। আর অফশোর ব্যাংকিংয়ে এগিয়ে রয়েছে বিদেশি ব্যাংক। আর রপ্তানি অর্থায়নে এগিয়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক।

গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকরা বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ায় দিকে ঝুঁকে পড়ায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এক ধরনের সঙ্কটে পড়েছে বলে বিশ্লেষণে এসেছে।

তৌফিক আহমেদ বলেন, “২০১৪ সালে ১৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। এই বিদেশি ঋণ দেশের ব্যাংকগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলো ভালো গ্রাহক হারাচ্ছে।”

সামগ্রিকভাবে সমস্যা হলেও গতবছর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও মানব সম্পদ উন্নয়নে এ খাত এগিয়েছে বলে মনে করে বিআইবিএম।

অনুষ্ঠানে গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, “অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণেই ব্যাংক খাতে বেশ কিছু অনিয়ম ঘটেছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সুপারভিশন (তদারকি) কৌশলে পরিবর্তন এনেছে।”

আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ব্যাংকের কর্পোরেট সুশাসন এবং পর্ষদের জবাবদিহিতা ও দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধানের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।