রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ‘অনেক বেশি’ এবং এতে পুরো ব্যাংক খাত চাপে রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল অভিমত দেওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ বুধবার রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠিয়ে পর্যবেক্ষক নিয়োগের কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নওশাদ আলী চৌধুরীকে সোনালী ব্যাংকে, আহমেদ জামালকে জনতা ব্যাংকে, নির্মল চন্দ্র ভক্তকে অগ্রণী ব্যাংকে এবং আব্দুর রহীমকে রূপালী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, অডিট কমিটি ও ক্রেডিট কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। এসব বৈঠকে উপস্থাপিত মেমো দেখে মতামত দিবেন। আইনবিরোধী ও আপত্তিকর কিছু থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্ট করবেন তারা।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী আর্থিক সূচকের উন্নতি না হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।
“এসব ব্যাংকের আর্থিক সূচকের ক্রমাবনতি হচ্ছে। এই অবনতির হাত থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ নানান সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরও ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে পারেনি। আবার সুশাসন নিশ্চিত করতেও ব্যর্থ হয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা আছে সেই শর্ত পরিপালনে পর্যবেক্ষকরা কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, আইএমএফের পরামর্শে পর্যবেক্ষক নিয়োগের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আইএমএফের আর্টিকেল ফোর মিশন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছে। ওই মিশনের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
দুই সপ্তাহের সফর শেষে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মিশন প্রধান রডরিগো কিউবেরো বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অভাব রয়েছে।
“এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার অনেক বেশি। এই খেলাপি ঋণের কারণেই পুরো ব্যাংকিং খাত চাপে রয়েছে। এতে সুদ হারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা ঋণ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এর সঙ্গে রয়েছে মূলধন ঘাটতি।
“পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট আছে, কী প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানি না। এজন্য যৌক্তিকতা নিয়েও কোনো মন্তব্য এখনই করতে চাই না।”
চারটি ব্যাংকেই নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সাধারণত মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়ে থাকে। আর নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে অন্যান্য যেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক আছেন তারা সবাই মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার।