বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে মানুষের সম্পদ বেড়েছে তিনগুণ; আর প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। আন্তর্জাতিক আর্থিক সেবা সংস্থা ক্রেডিট সুসির সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।
Published : 15 Oct 2015, 05:07 PM
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী দরিদ্রের ব্যবধান দিন দিন বাড়তে থাকায় বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে মাত্র এক শতাংশ মানুষের হাতে।
ক্রেডিট সুসির তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে বাংলাদেশের মোট প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ২৬ লাখের বেশি। আর ২০১৫ সালের মাঝামাঝি এসে তা ১০ কোটি ৭২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
২০০০ সালে বাংলাদেশের মানুষের হাতে ৭৮ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ ছিল। ১৫ বছরের মাথায় তা বেড়ে হয়েছে ২৩৭ বিলিয়ন।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ধনী যে দেশের বাসিন্দা, সেই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের হাতে রয়েছে ৮৫ হাজার ৯০১ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ।
আর এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতি ভারতের মানুষের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৪৭ বিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের মানুষের হাতে ৪৯৫ বিলিয়ন, শ্রীলঙ্কায় ৭৩ বিলিয়ন ডলার এবং নেপালে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে পূর্ণবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু সম্পদ ১০৬৯ ডলার থেকে বেড়ে ২২০১ ডলার হয়েছে।
এর মধ্যে আর্থিক সম্পদের পরিমাণ গড়ে ৪৪১ ডলার থেকে বেড়ে ৭৯৫ ডলার হয়েছে। আর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৫২ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৭০ ডলার।
সম্পদের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঋণ। বর্তমানে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশির ঋণের পরিমাণ ৬৪ ডলার, যা ১৫ বছর আগে ২৪ ডলার ছিল।
পূর্ণবয়স্ক নাগরিকদের ৯৬.৭ শতাংশের হাতে যে সম্পদ রয়েছে, তার পরিমাণ মাথাপিছু দশ হাজার ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার কম। বাকিদের সম্পদের পরিমাণ গড়ে দশ হাজার থেকে এক লাখ ডলারের মধ্যে।
এদের মধ্যে ১২ লাখ বাংলাদেশিকে ‘মধ্যব্ত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ক্রেডিট সুসি, যাদের প্রত্যেকের হাতে অন্তত ১৭ হাজার ৮৮৬ ডলারের সম্পদ রয়েছে।
মানুষের সম্পদ বাড়লেও বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের অবস্থানের খুব একটা নড়চড় হয়নি। ২০০০ সালে বাংলাদেশিদের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ ছিল বৈশ্বিক সম্পদের ০.১ শতাংশের কম; এখনও তাই।
১ শতাংশের হাতে বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ
এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে মধ্যবিত্ত শ্রেণি দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে; যদিও এই প্রথমবারের মত চীনের মধ্যবিত্তের সংখ্যা (১০ কোটি ৯০) যুক্তরাষ্ট্রকে (৯ কোটি ২০ লাখ) ছাড়িয়ে গেছে।
ক্রেডিট সুসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তিজানে থিয়াম বলেন, বিশ্বমন্দার আগে দীর্ঘ সময় পৃথিবীতে মধ্যবিত্তের আর্থিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল ছিল।
“মন্দার পর ধনীদের সম্পদে শনৈ শনৈ উন্নতি হলেও মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে এই গতি অত্যন্ত ধীর।”
ক্রেডিট সুসি বলছে, কারও হাতে ৩ হাজার ২১০ ডলার থাকলেই তিনি বিশ্বের ধনীদের প্রথম পঞ্চাশ শতাংশের একজন হতে পারবেন। আর ধনীদের ক্লাবে প্রথম দশ শতাংশের মধ্যে আসতে হলে থাকতে হবে ৬৮ হাজার ৮০০ ডলার।
আর যারা এই তালিকার শীর্ষ ১ শতাংশের মধ্যে রয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই এখন অন্তত ৭ লাখ ৫৯হাজার ৯০০ ডলারের মালিক।
এতে বলা হয়েছে, বিশ্ব জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৩৪০ কোটি মানুষের মাথাপিছু সম্পদ ১০ হাজার ডলারের কম। ১০০ কোটি লোকের সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের মধ্যে।
বাকিদের মধ্যে ৮ শতাংশের (৩৮৩ মিলিয়ন মানুষ) প্রত্যেকের সম্পদের অর্থমূল্য ১ লাখ ডলারের বেশি। এদের মধ্যে ৩৪ মিলিয়নই যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা; আর তাদের ৪৫ হাজারের সম্পদের পরিমাণ আবার ১০ কোটি ডলারের উপরে।
২০০৮ থেকে সম্পদের এই বৈষম্য ‘তীব্রতর হচ্ছে’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশের হাতে রয়েছে বিশ্বের মোট সম্পদের ৫০.৪ শতাংশ।
এই অসাম্য অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বেড়ে ৪ কোটি ৯৩ লাখে দাঁড়াবে বলে ক্রেডিট সুসির ধারণা।
এর আগে অক্সফামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১ শতাংশ ধনী ব্যক্তির মোট সম্পদের পরিমাণ বাকি ৯৯ শতাংশের হাতে থাকা সম্পদকে ছাড়িয়ে যাবে।
সেই ধারণাই ‘সত্যি হতে চলেছে’ মন্তব্য করে ক্রেডিট সুসির প্রতিবেদন প্রকাশের পর অক্সফামের কর্মকর্তা মার্ক গোল্ডবার্গ গার্ডিয়ানকে বলেন, “এ প্রতিবেদন সর্বশেষ প্রমাণ, যেখানে বোঝা যাচ্ছে যে অতি দারিদ্র্য আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।”
সম্প্রতি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে দারিদ্র্য নির্মূলের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আদৌ বৈষম্য কমানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন গোল্ডবার্গ।
ক্রেডিট সুসির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিশ্বের মোট সম্পদের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার কমে ২৫০ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিশ্বমন্দার মধ্যে ২০০৮ সালের পর সম্পদের পরিমাণে এবারই প্রথম পতন ঘটল।
এর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের মানের পতনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ক্রেডিট সুসির প্রতিবেদনে।