সহজ শর্তে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ ‘থাকছে’ ২০২৪ সাল নাগাদ

মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উঠলেও আগামী ২০২৪ সালের আগে বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের স্বল্প সুদের ঋণের দরজা খোলা থাকছে।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2015, 06:09 PM
Updated : 4 Oct 2015, 06:09 PM

ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এসিস্ট্যান্সের (আইডিএ) আওতায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে বর্তমানে এই ঋণ পায় বাংলাদেশ।

মধ্য আয়ের দেশের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি সুদের ঋণ ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপম্যান্টের (আইবিআরডি) আওতায় ঋণে সুদের হার প্রায় ৪ শতাংশ। 

এত বেশি সুদে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার সামর্থ্য বাংলাদেশের অর্থনীতির নেই বলেই অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

বাংলাদেশকে সম্প্রতি নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছে বিশ্ব ব্যাংক। অর্থনীতির এই সক্ষমতার পাশাপাশি আগের মতো স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার সুবিধা হারানোর ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য আইডিএ প্লাস নামে নতুন একটি উইন্ডোর প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি ইউহানেস জাট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করে নতুন প্রস্তাবটি দেন।

ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইচ্ছা করলে ২০১৭ সাল থেকে বর্তমানে যে হারে ঋণ নিচ্ছে তার চেয়ে বেশি নিতে হলে আইডিএ প্লাস উইন্ডো থেকে নিতে পারবে।

এ বিষয়ে বৈশ্বিক সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের সপ্তদশ প্যাকেজ চলছে। প্রতি প্যাকেজের বাস্তবায়নকাল তিন বছর। বর্তমান প্যাকেজটি ২০১৫ সালে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০১৭ সালে।

অষ্টাদশ প্যাকেজের জন্য আগামী ১৬ সালে বৈঠকে বসবে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ। ওই বৈঠকে ২০১৫ সালের মাথা পিছু আয়ের ভিত্তিতে যেসব দেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবে সেসব দেশকে এআইডির ঋণের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর পর রিভিউ বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকেই পরবর্তী তিন বছরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।

জাহিদ হোসেন বলেন, “চলতি বছর সরকার ১ হাজার ৩১৪ ডলারের যে মাথাপিছু আয় প্রাক্কলন করেছে তা রিভিউতে অনেক কমে আসবে। মাথাপিছু আয় এক হাজার ২১৫ ডলারের বেশি হওেয়ার সম্ভাবনা আমি দেখছি না। অর্থাৎ ওই বৈঠকে বাংলাদেশ আইডিএ ঋণ নেওয়ার তালিকা থেকে বাদ যাবে না।”

বিশ্ব ব্যাংকের এর পরের রিভিউ বৈঠকটি হবে ২০১৯ সালে।

“ওই বৈঠকে বাংলাদেশ মাথা পিছু আয়ের দিক দিয়ে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারে। ওই প্যাকেজে সিদ্ধান্ত হলে তা কার্যকর হবে পরের প্যাকেজ থেকে। অর্থাৎ ২০২২ সাল পর্যন্ত নিরাপদেই বিশ্ব ব্যাংকের সবচেয়ে সস্তা ঋণ আইডিএ পাওয়া যাবে,” বলেন জাহিদ হোসেন।

এরপরও বাংলাদেশ যাতে টেকসইভাবে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারে তার জন্য আরও ২ বছর সময় দেবে বিশ্ব ব্যাংক।

সে হিসাবে আগামী ২০২৪ সালের আগে বাংলাদেশের জন্য আইডিএ ঋণ বন্ধ হচ্ছে না বলে মত জানান সংস্থার এই অর্থনীতিবিদ।

বিশ্ব ব্যাংকের নতুন প্রস্তাব আইডিএ প্লাস সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে দারিদ্র্য হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে দরিদ্র দেশগুলোকে কম সুদের ঋণ সহযোগিতা দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাস পর্যন্ত তারা বাংলাদেশকে অনুদান ও ঋণসহ প্রায় ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫১৯ কোটি ডলার ছাড় করেছে।