আটকে আছে ২২ বিলিয়ন ডলার

দাতাদের প্রতিশ্রুত ঋণ সহায়তার অর্ধেকও ব্যবহার করতে পারছে না বাংলাদেশ।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2015, 05:27 PM
Updated : 20 August 2015, 05:15 AM

গত কয়েক বছরে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা গড়ে ৬০০ কোটি (৬ বিলিয়ন) ডলার করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাংলাদেশ খরচ করেছে গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার করে।

প্রতিশ্রুত অর্থ ব্যবহার করতে না পারার কারণেই সরবরাহ লাইনে (পাইপলাইন) আটকে থাকছে বিশাল অংকের ঋণ সহায়তা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ৩০ জুন পর্যন্ত সরবরাহ লাইনে দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি (প্রায় ২২ বিলিয়ন) ডলার।

বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ (প্রতি ডলার ৭৯ টাকা হিসাবে) প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই সরবরাহ লাইনে এত ঋণ সহায়তা আটকে থাকেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির বৈদেশিক বাজেট সহায়তা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফরিদা নাসরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিগত পাঁচ বছর ধরে সরকার দাতাদের কাছ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার করে ঋণের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে। কিন্তু ব্যয় করতে পারছে গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও কম। মূলত এ কারণেই পাইপলাইনের আকার বাড়ছে।

“তবে বাংলাদেশের ঋণ সক্ষমতার বিচারে এই পাইপলাইন বড় নয়। বাংলাদেশের এর দ্বিগুণ পাইপলাইন বহনের সক্ষমতা রয়েছে।

ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত সরবরাহ লাইনে আটকে ছিল ১ হাজার ৯৫০ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত এক বছরে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও ২২০ কোটি ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরবরাহ লাইনের আকার ছিল ১ হাজার ৬৬২ কোটি ডলার।

সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রতিবছর প্রকল্পের ২০ শতাংশ হারে অর্থ ব্যয় করতে পারলে আগামীতে ‘পাইপলাইনের’ আকার কমে আসবে বলে মনে করেন অতিরিক্ত সচিব ফরিদা নাসরিন।

ইআরডির অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব ব্যাংক) কাজী শফিকুল আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঋণ সহায়তা দেয় বিশ্ব ব্যাংক।

“সংস্থাটির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলোর বিপরীতে গড়ে ২০ শতাংশের বেশি অর্থ ছাড় করতে পারছি। সে হিসাবে আমি সফল। তবে সম্প্রতি বেশি বেশি চুক্তি হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে অর্থ ব্যয়ের এ হার বজায় রাখতে পারলে পাইপলাইন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”

তবে এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেন তিনি।

এদিকে পাইপলাইনে পড়ে থাকা অর্থের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বৈঠক করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। ওইসব বৈঠকের পর বৈদেশিক মুদ্রার ছাড় বাড়াতে ইআরডির বৈদেশিক বাজেট সহায়তা অনুবিভাগকে বাস্তবায়ন হারে দুর্বল বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকারী সংস্থার সঙ্গে ত্রৈমাসিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার বাড়াতে আরও ছয়টি ‍সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ধীর গতির প্রকল্প বাছাই করে সমস্যা চিহ্নিত করে গতি বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ, ধীর গতির প্রকল্পগুলোর সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন নিয়ে পরবর্তী সভায় আলোচনা, দাতা সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পের বিলম্বের কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধান করা এবং চুক্তি সইয়ের পর দুই মাসের মধ্যে অর্থছাড় শুরু না হলে সংশ্লিষ্ট দাতার সঙ্গে বৈঠক করে করণীয় ঠিক করা।

এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকে প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থের ব্যবহারে ইতিবাচক ফল দেখা যাচ্ছে বলে ফরিদা নাসরিন জানিয়েছেন।